Logo

ইসলাম

শীতকালীন আমল; জান্নাতের পথে সুবর্ণ সুযোগ

Icon

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৪

শীতকালীন আমল; জান্নাতের পথে সুবর্ণ সুযোগ

শীতকাল কেবল ঠান্ডা, কুয়াশা এবং অল্প আলোয় দিন কাটানোর সময় নয়। এটি মুমিনদের জন্য ইবাদতের এক বিশেষ মৌসুম, যা জান্নাত অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে শীতকালের সুযোগগুলোকে কাজে লাগানোকে সরাসরি জান্নাত লাভের পথ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শীতকালে প্রত্যেক মুমিনের উচিত এই সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো।

শীতকালে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্ত মুসলিমকে খাওয়ায়, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে। খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোনো পিপাসু মুসলিমকে পানি পান করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে পানি পান করাবেন।" (সহীহ বুখারি: ৫৭৪, সহীহ মুসলিম: ১০৬০)

শীতের মৌসুমে মানুষের পোশাকের প্রয়োজন বেড়ে যায়। বস্ত্রহীনদের পাশে দাঁড়িয়ে পোশাক প্রদান করা, শুধু দুনিয়ার সাহায্য নয়, জান্নাত লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্য মুসলিমকে পোশাক প্রদান করে, আল্লাহ তাকে বিপদ ও মুসিবত থেকে রক্ষা করেন যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ পোশাক ব্যবহার হয়।

শীতকাল নামাজ এবং অন্যান্য ইবাদতের জন্যও বিশেষ সময়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন: যে ব্যক্তি দুই ঠান্ডার সময়-ফজর ও এশার নামাজ আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহীহ বুখারি: ৫৭৪, সহীহ মুসলিম: ৬৮৭)

ঠান্ডা সহ্য করে নামাজ আদায় করলে সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। এটি শুধুমাত্র ইবাদত নয়, ধৈর্য, ধ্যান ও ঈমানের প্রতিফলন। এছাড়া শীতের কষ্ট সহ্য করে ভালোভাবে অজু করা আল্লাহর কাছে বিশেষ প্রিয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, শীত বা গরম, কষ্টকর অবস্থায় অজু করলে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের গুনাহ মাফ করবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। (সহীহ মুসলিম: ২৫১)

রোজা রাখা শীতকালে সহজ হয়ে যায়। দিনের আলো ছোট হওয়ায় দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা চাপ কমে। তাই আগের কাজা রোজা আদায় করা বা নফল রোজা রাখার জন্য এটি এক বিশেষ সুযোগ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন: যে ব্যক্তি এক দিন নফল রোজা রাখল, আল্লাহ জাহান্নামের সঙ্গে তার মধ্যে সাত মাসের দূরত্ব সৃষ্টি করবেন। (সহীহ বুখারি: ২৮৪০)

শীতকাল মুমিনদের জন্য নফল রোজা রাখার সুবর্ণ সময়। এটি আখেরাতের জন্য অপরিসীম সওয়াব বয়ে আনে। শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় রাতে ইবাদতের সুযোগও অনেক বেড়ে যায়। দীর্ঘ রাত নফল নামাজ, তিলাওয়াত ও দোয়া করার জন্য অনন্য সময়। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: নিশ্চয় মুত্তাকিরা জান্নাতসমূহে থাকবে। তারা রাতের সামান্য সময় ঘুমিয়ে কাটাবে, বাকি সময় ইবাদতে ব্যয় করবে। (সূরা জারিয়াত: ১৫-১৭)

রাতের ইবাদত মুমিনের জীবনে আল্লাহর নিকট সান্নিধ্য বৃদ্ধি করে এবং জান্নাতের পথে অমূল্য সহায়ক। প্রকৃত মুমিনরা কখনো শীতের ঠান্ডাকে ভয় পান না। বরং তারা জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি লাভের জন্য শীতকালকে বিশেষ সময় মনে করেন। শীতকালে ইবাদত, অসহায়দের সহায়তা এবং নফল রোজা- এসব মিলিয়ে জান্নাতের পথে একটি সুবর্ণ সুযোগ।

শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় আমরা নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ ও কোরআন তেলাওয়াত করতে পারি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি রাতে নামাজ পড়ে, আল্লাহ তার দিনের ক্লান্তি দূর করবেন। (সহীহ মুসলিম: ৭১৬) শীতকাল আত্মিক প্রশান্তি ও নৈকট্য অর্জনের একটি অনন্য সময়।

শীতকালে অতিরিক্ত ভোগ বা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বৃদ্ধি পায়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, নিজেদের সম্পদ ব্যয় করো, কিন্তু অতিরিক্ত ব্যয় করে নষ্ট করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ নষ্টাকারীদের ভালোবাসেন না। (সুরা আল-ইমরান: ২৭) শীতকাল আমাদের শেখায় সংযমী, দায়িত্বশীল ও নৈতিক জীবনযাপন।

শীতকাল কেবল ঠান্ডা আবহাওয়া নয়, এটি মুমিনদের জন্য শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক উন্নতির সময়। স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রাখা, রোগ প্রতিরোধ, ধৈর্য ধারণ, প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেওয়া, দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য, রাতের দীর্ঘায়নে ইবাদত ও কোরআন পাঠ এবং সংযমী জীবনযাপন-সবই শীতকালকে আল্লাহর শিক্ষা ও দায়িত্বপূর্ণ সময়ে পরিণত করে। শীতকাল আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবন পরিবর্তনশীল এবং আল্লাহর নির্দেশ পালন আমাদের সার্থকতা ও শান্তি প্রদান করে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই ঋতুতে ইবাদত, সহমর্মিতা, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও নৈতিকতা বৃদ্ধি করার তাওফিক দিন।

শীতকাল শুধু ব্যক্তিগত ইবাদতের জন্য নয়, সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। দরিদ্র ও অসহায়দের সহায়তা, খাবার ও পোশাক পৌঁছে দেওয়া, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষের যত্ন- এসব কর্ম মুমিনের ঈমানকে শক্তিশালী করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক।

প্রতিটি মুহূর্তকে ইবাদতের কাজে ব্যবহার করা শীতকালকে বিশেষ করে তোলে। নামাজ, রোজা, অজু, দোয়া, নফল ইবাদত এবং দরিদ্রদের সহায়তা- এসব আল্লাহর রহমত বয়ে আনে। শীতকাল এমন এক সময়, যেখানে দৈনন্দিন কাজও ইবাদতে পরিণত হতে পারে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে শীতকালে বেশি বেশি ইবাদত করার তাওফিক দিন। শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শক্তি দান করুন এবং আমাদের সব কাজকে জান্নাত লাভের মাধ্যমে পূর্ণ করুন। আমিন।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইসলাম ধর্ম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর