আ.লীগের নিবন্ধন বাতিল আলোচনায়, আইনে যা আছে

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ০৯:৩৫

আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মুখে উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার স্বার্থে আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে।
সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকেই আলোচনায় রয়েছে দলটির নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি। কোনো দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে বা কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলে সে দলের নিবন্ধন বাতিল করার বিধান রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়টি আমার একক কোনো সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগ কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারি গেজেট পেলে আমরা বৈঠকে বসবো। তাছাড়া কোনো দলের নিবন্ধন বাতিলের বিদ্যমান কিছু আইন রয়েছে।
নিবন্ধন বাতিলে নির্বাচন কমিশনের যত আইন রয়েছে :
ক. নিবন্ধন পাওয়ার পর কোনো দলের সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় না থাকলেও সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান আইনে রয়েছে। অন্যদিকে সরকার যদি কোনো দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, তা হলে সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
খ. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২ অনুযায়ী, কোনো দলকে নিজেদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পেতে হয়। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট দল অন্য দলের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করতে পারলেও নিজেদের পরিচয়ে ভোটে অংশ নিতে পারে না। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। আর সংশ্লিষ্ট আইনে নিবন্ধন বাতিলের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গ. আরপিও-এর ৯০জ(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কী কারণে কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি। যেমন— দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটি, সেটি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, সেই কমিটি যদি দলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে বা নিবন্ধন বাতিলের জন্য দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা তাদের সমপর্যায়ের পদাধিকারী ব্যক্তি কর্তৃক দলীয় সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীসহ কমিশন বরাবর আবেদন করা হয়।
অথবা নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। এ আদেশ ও বিধিমালার অধীন কমিশনে প্রেরিতব্য কোনো তথ্য (একাদিক্রমে তিন বছর) প্রেরণ করতে ব্যর্থ হয় বা কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক (অনুচ্ছেদ ৯০খ-এর দফা (১)(খ)) এর কোনো বিধান লঙ্ঘন করা হয় বা কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে—সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি।
ঘ. অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আরপিও-এর ৯০জ অনুচ্ছেদের (১)(খ) দফা অনুযায়ী, সরকারের নিষেধাজ্ঞার আলোকেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারে ইসি। অন্যদিকে এ অনুচ্ছেদের (ঘ) দফা অনুযায়ীও (যা ৯০খ অনুচ্ছেদের (১)(খ) দফাতে বর্ণিত) দলটির নিবন্ধন বাতিল করা যাবে। কেননা ওই দফায় (১)(ক) দফাও প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে। আর ৯০খ অনুচ্ছেদের ১ এর (ক) এর (ই) দফায় বলা হয়েছে, নিবন্ধনের জন্য সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ অন্যান্য কার্যালয় থাকতে হবে।
ঙ. এ ছাড়া কমিশন থেকে চাহিদা মোতাবেক কোনো তথ্য পরপর তিন বছর কোনো দল না দিতে পারলে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দলের সব স্তরের ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পদ পূরণ করতে না পারলে, শিক্ষক, ছাত্র, আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার কর্মচারী বা শ্রমিকদের বা অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠন করলে—প্রভৃতি কারণে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি।
এসআইবি/এমবি