Logo

আইন ও বিচার

অপরাধ মাফ হয় কি না?

ফৌজদারি মামলায় ‘রাজসাক্ষী’ কে হন, কেন হন?

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২১

ফৌজদারি মামলায় ‘রাজসাক্ষী’  কে হন, কেন হন?

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গিবিরোধী অভিযান, দুর্নীতি মামলা এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের বেশ কিছু ঘটনায় ‘রাজসাক্ষী’ বা Approver তৈরির আলোচনা নতুন করে সামনে এসেছে। অপরাধ দমনে রাজসাক্ষীর ভূমিকা কখনও তদন্তকে গতি দেয়, আবার কখনও এর অপব্যবহারের অভিযোগ  তোলেন মানবাধিকার কর্মীরা। প্রশ্ন হলো- রাজসাক্ষী কে হন, কেন হন এবং রাজসাক্ষী হলে অপরাধ কি পুরোপুরি মাফ হয়ে যায়?

রাজসাক্ষী কে? 

ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় কোনো অপরাধে জড়িত ব্যক্তি নিজের অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে সম্মত হলে তাকে রাজসাক্ষী বলা হয়।

বাংলাদেশে এ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়-

ফৌজদারি কার্যবিধি (CrPC) ১৯১ ও ৩০৬-৩০৮ ধারা, এবং এভিডেন্স অ্যাক্ট-এর অধীনে।

রাজসাক্ষীর উদ্দেশ্য হলো- গুরুতর বা সংঘবদ্ধ অপরাধে মূল পরিকল্পনাকারী, নেতা বা বড় অপরাধীদের বিরুদ্ধে তথ্য পাওয়া, যারা সাধারণত সরাসরি ধরা পড়ে না বা প্রমাণের অভাবে দণ্ড এড়িয়ে যান।

কেন কেউ রাজসাক্ষী হন?

আইনজীবীদের মতে, তিনটি কারণে কোনো অভিযুক্ত রাজসাক্ষী হতে আগ্রহী হন- শাস্তি কমার সম্ভাবনা, নিজেকে বাঁচানো বা কম দায়ে নিস্তার পাওয়া, প্রক্রিয়া অনুযায়ী বিচারকের বিবেচনায় মুক্তি বা শর্তসাপেক্ষ ছাড় পাওয়ার সুযোগ, তদন্তকারী সংস্থার জন্য এটি অনেক সময় অপরাধের ‘ভিত্তি পর্যন্ত’ পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হয়ে ওঠে।

রাজসাক্ষী হলে কি অপরাধ মাফ হয়ে যায়?

এ প্রশ্নটি সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টি করে।

আইন অনুযায়ী উত্তরটি হলো- না, অপরাধ নিজে থেকে মাফ হয় না। CrPC৩০৬ ও ৩০৮ ধারায় বলা আছে- রাজসাক্ষী হতে হলে অভিযুক্তকে আদালতে সম্পূর্ণ ও সত্য তথ্য দিতে হবে। যদি আদালত সন্তুষ্ট হন যে তিনি সত্য তথ্য দিয়েছেন, তাহলে বিচারক শর্তসাপেক্ষ ক্ষমা (conditional pardon) দিতে পারেন।

আবার, আদালত চাইলে তাকে দণ্ডের আওতায়ও আনতে পারেন- বিশেষত যদি দেখা যায় তিনি মিথ্যা বলেছেন, তথ্য গোপন করেছেন বা তদন্তকে বিভ্রান্ত করেছেন।

অর্থাৎ রাজসাক্ষী হওয়া মানেই অপরাধ থেকে মুক্তি নয়।

এটি নির্ভর করে- তার দেওয়া তথ্যের সত্যতা, তদন্তে অবদান এবং আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর।

অনেক ক্ষেত্রে রাজসাক্ষীকে দীর্ঘদিন সাক্ষী-সুরক্ষা প্রোগ্রামে রাখা হয়; কিছু ক্ষেত্রে রায় পর্যন্ত তাকে ‘অভিযুক্ত’ হিসেবেই তালিকাভুক্ত রাখা হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন অপরাধের তদন্তে রাজসাক্ষীর ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে- বিশেষত, বহুল আলোচিত হত্যা মামলা, জঙ্গিবাদ ও সংগঠিত অপরাধ, দুর্নীতি ও অর্থপাচার, অপরাধচক্রভিত্তিক মামলাগুলোতে। 

তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে- কিছু ক্ষেত্রে রাজসাক্ষী বানানোর চাপে নির্যাতন বা জবরদস্তির অভিযোগ উঠে আসে। তারা বলে- রাজসাক্ষী করার পুরো প্রক্রিয়াটি আদালতের তত্ত্বাবধানে, স্বেচ্ছাসম্মতির ভিত্তিতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত রেখে সম্পন্ন হওয়া উচিত।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রের পক্ষে তথ্যদাতা হিসেবে রাজসাক্ষী গুরুত্বপূর্ণ; তবে এটি যেন কখনও অন্যায় উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।

বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় রাজসাক্ষী একটি স্বীকৃত ও কার্যকর প্রক্রিয়া। কিন্তু এটি অপরাধীর জন্য ‘স্বয়ংক্রিয় ক্ষমা’ নয়। আদালতের ওপরই নির্ভর করে- কাকে ক্ষমা দেওয়া হবে, কার দণ্ড হবে, এবং কার তথ্য মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেবে।

আইনজীবী এ কে আজাদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন,  “রাজসাক্ষী বিচারকে সহযোগিতা করার সুযোগ দেয়, কিন্তু বিচার তাকে ক্ষমা করবে কি না- তা সম্পূর্ণ আদালতের বিবেচনার বিষয়।” 

বিকেপি/এনএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর