Logo

আইন ও বিচার

জমির নকশা ও খতিয়ানের ভুল সংশোধন প্রক্রিয়া দ্রুত করার দাবি

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৬

জমির নকশা ও খতিয়ানের ভুল সংশোধন প্রক্রিয়া দ্রুত করার দাবি

বাংলাদেশে জমি সংক্রান্ত নকশা (ম্যাপ) ও রেকর্ড (খতিয়ান/পরচা)-এ ভুল দীর্ঘদিন ধরে জনদুর্ভোগের অন্যতম প্রধান উৎস। ভুল দাগ, সীমানা অমিল, নামের বানান ত্রুটি, জমির পরিমাণ ভুল দেখানো-  এসব সমস্যা পরবর্তীতে মালিকানা দাবিদারিত্ব, দখল বিবাদ এবং আদালত- মামলার জন্ম দেয়। ভূমি প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে এসব ভুল সংশোধনের আইনগত পথ থাকলেও বহু ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা প্রক্রিয়াগত জটিলতা ও প্রশাসনিক অনীহার কারণে কাক্সিক্ষত সেবা সময়মতো পান না। ফলে ভুল নকশা ও রেকর্ড সংশোধন এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। 

বাংলাদেশে ভূমি রেকর্ড সংরক্ষণ, সংশোধন ও হালনাগাদের দায়িত্বে রয়েছে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর (উখজঝ) এবং মাঠ প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) দপ্তর। জরিপের সময় প্রণীত প্রাথমিক রেকর্ড জনগণের সামনে উন্মুক্ত করে ৩০ দিনের জন্য আপত্তি গ্রহণ করা হয়। এ সময় দাগ- সীমানা ভিন্নতা, জমির পরিমাণ জটিলতা বা মালিকানার অসঙ্গতি থাকলে জমির মালিক লিখিত আপত্তি দাখিল করতে পারেন। কিন্তু অনেক জমি মালিক এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত না থাকায় পরবর্তীতে চূড়ান্ত রেকর্ডে ভুল থেকেই যায়।

২০২১ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় রেকর্ড সংশোধন পরিপত্র নং ৩৪৩ জারি করে সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে ক্লারিক্যাল বা সামান্য ভুল সংশোধনের ক্ষমতা প্রদান করে। নামের বানানভুল, দাগ নম্বর গরমিল বা পরিমাণগত অমিল এখন মাঠপর্যায়ে সংশোধনযোগ্য। সংশ্লিষ্ট পক্ষের শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয় এবং কেউ সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হলে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রিভিউ আবেদন করতে পারেন।

সরকার বলছে, এই ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ হওয়ায় রেকর্ড সংশোধনের প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়েছে। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিন্ন কথা বলে। অনেক জায়গায় ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা উপজেলা ভূমি অফিস সংশোধন আবেদন গ্রহণে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। জমি মালিকেরা অভিযোগ করেন, কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও দালাল চক্রের কারণে সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায্য সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। জরিপকৃত মানচিত্রে ভুল থাকলে সংশোধন পেতে আরও সময় লাগছে, কারণ সংশ্লিষ্ট সেকশনে পর্যাপ্ত জনবল ও প্রযুক্তি নেই।

যেসব ভুল সহকারী কমিশনারের ক্ষমতার বাইরে, সেসব ক্ষেত্রে প্রার্থীদের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল অথবা দেওয়ানি আদালতে যেতে হয়। ট্রাইব্যুনাল রেকর্ডকে “ভুল” ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসকে সংশোধনের নির্দেশ দিতে পারে। তবে দেশের বহু এলাকায় পৃথক ট্রাইব্যুনাল না থাকায় দীর্ঘ সময় মামলা ঝুলে থাকে। ফলে ভুক্তভোগীর সময়, অর্থ ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়।

ভূমি আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমি প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হলে রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করা জরুরি। ইতিমধ্যে ডিজিটাল মৌজা ম্যাপ ও অনলাইন নামজারি ব্যবস্থা চালু হলেও সমন্বিত ডিজিটাল রেকর্ডিং এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে কাগজপত্রভিত্তিক ত্রুটি থেকে প্রযুক্তিনির্ভর ভুলে রূপান্তর হলেও প্রকৃত সমাধান আসেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি জেলা বা উপজেলায় পর্যাপ্ত ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল স্থাপন, ভূমি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, দালালমুক্ত অফিস স্থাপন এবং ডিজিটাল রেকর্ড যাচাই ব্যবস্থা চালু করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। 

পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে সরকারি প্রচারণা, প্রশিক্ষণ ও অনলাইন গাইডলাইন প্রয়োজন।

জমি সম্পর্কিত ভুল রেকর্ড শুধু একটি প্রশাসনিক বা প্রযুক্তিগত ভুল নয়-  এটি সাধারণ মানুষের সম্পত্তির নিরাপত্তা, উত্তরাধিকার এবং ভবিষ্যত আর্থিক বিনিয়োগকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তাই ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থাকে আধুনিক, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক করার বিকল্প নেই। দেশের কোটি মানুষের জমির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত, সাশ্রয়ী ও জনবান্ধব রেকর্ড সংশোধন ব্যবস্থা চালু করা এখন সময়ের দাবি।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর