পরিবেশ দূষণ ও আইন প্রয়োগে বাংলাদেশ কি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারছে?
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০৪
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে দ্রুত এগোচ্ছে। কিন্তু এই অগ্রগতির আড়ালে নীরবে বাড়ছে ভয়ঙ্কর এক সংকট— পরিবেশ দূষণ। রাজধানী ঢাকা এখন বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহরগুলোর একটি; নদী, বায়ু, শব্দ ও মাটির দূষণ আমাদের জনস্বাস্থ্য, কৃষি ও অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন হলো- আইন কি আছে? হ্যাঁ, আছে। কিন্তু তা কি যথেষ্ট? অথবা কার্যকরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে?
আইন আছে- কিন্তু কতটা কার্যকর? : বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ রোধে বিদ্যমান প্রধান আইন হলো বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ও এর সংশোধনীসমূহ (২০০০, ২০০২, ২০১০)। এই আইনের আওতায় দূষণ ঘটালে সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, কিংবা উভয় দণ্ডই হতে পারে। সংশোধিত ধারায় কখনো কখনো এর চেয়েও বেশি দণ্ডের উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০- যেখানে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালাসহ আরও নানা উপ- বিধি।
আইনগত কাঠামো তাই দুর্বল নয়; বরং দক্ষিণ এশিয়ায় তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী বলা যায়।
বাস্তবায়ন কেন পিছিয়ে? : আইনের শক্তি তার প্রয়োগে। কিন্তু এ জায়গাতেই রয়েছে ভয়াবহ ঘাটতি। অপর্যাপ্ত নজরদারি ও মনিটরিং— পরিবেশ অধিদপ্তরের জনবল ও প্রযুক্তি এখনো পর্যাপ্ত নয়। ফলে শত শত শিল্পকারখানা নিয়মিত মনিটর করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
পরিবেশ আদালত পুরোপুরি কার্যকর নয়। প্রতিটি জেলায় পরিবেশ আদালত গঠনের কথা থাকলেও, বাস্তবে খুব কম জেলায় তা পূর্ণাঙ্গভাবে সক্রিয়। মামলার সংখ্যা কম, শাস্তির দৃষ্টান্ত আরও কম। এছাড়া রয়েছে শিল্পকারখানার উদাসীনতা। অসংখ্য কারখানা পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে; দূষণরোধী ঊঞচ বন্ধ রেখে উৎপাদন করার অভিযোগও নিয়মিত। জরিমানার পরিমাণ কম হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে এটি ‘গণনায় আসে না’।
রয়েছে জনসচেতনতার ঘাটতি। আইন মানা শুধু সরকারের কাজ নয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবেশের অধিকার, অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি বা পরিবেশ আদালতের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা তুলনামূলক কম।
ঢাকা আইনজীবী বেশ কয়েকজন সিনিয়র সদস্য বাংলাদেশের খবরকে বলেছেন, আইনকে কার্যকর করতে জরুরী কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যেমন- পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতা বাড়ানো- জনবল, প্রযুক্তি, মনিটরিং ল্যাব বাড়াতে হবে। জরিমানার পরিমাণ সময়োপযোগী করা- বড় শিল্পকারখানার ক্ষেত্রে জরিমানা বড় আকারে বাড়ানো প্রয়োজন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা- উচ্চ আদালত ও পরিবেশ আদালতকে আরও সক্রিয় হতে হবে। নদী, বায়ু ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পৃথক বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে।
নাগরিক অংশগ্রহণ বাড়ানো- পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের সহজ করা, অভিযোগ গ্রহণ ডিজিটালাইজ করা উচিত। স্বরাষ্ট্র, শিল্প ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত অভিযান জরুরি।
সিনিয়র আইনজীবী রাজা মিয়া গতকাল এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশে পরিবেশ আইন আছে, শাস্তির বিধানও আছে- কিন্তু আইনের কঠোর প্রয়োগই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এডভোকেট গাজী শাহ আলম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, পরিবেশ রক্ষাকে আমরা যদি শুধুই “উন্নয়নের পথের বাধা” হিসেবে দেখি, তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যাব একটি অসুস্থ, অনিরাপদ এবং অস্থিতিশীল দেশ।
পরিবেশ রক্ষা কোনো বিলাসিতা নয়; এটি মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার। তাই এখন সময়-আইনকে প্রয়োগের মাধ্যমে বাস্তব শক্তিতে রূপ দেওয়ার।
বিকেপি/এমবি

