Logo

আইন ও বিচার

বাজারে ভেজাল কসমেটিকস সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর কারাদণ্ড

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৪

বাজারে ভেজাল কসমেটিকস সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর কারাদণ্ড

দেশের বাজারে আমদানিকৃত কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের প্রায়  অর্ধেকই ভেজাল বা নিম্নমানের হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও বলেছে, ‘বাজারে অধিকাংশ কসমেটিকস নকল, নিম্নমানের’।  বিএসটিআই (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন) নিয়মিত অভিযান চালিয়ে কোটি টাকার ভেজাল কসমেটিকস জব্দ করেছে। 

এসব ভেজাল কসমেটিকস ব্যবহার করে ভোক্তারা চর্মরোগ, এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক (যেমন লেড বা ক্রোমিয়াম)-সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।  ভেজাল পণ্য বিক্রিতে প্রশাসনিকভাবে অনুমোদিত, আইনগতভাবে সঠিক আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে পড়ছেন।  ভোক্তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন- মানহীন বা ক্ষতিকর কসমেটিকস কিনে তাদের স্বাস্থ্যে ঝুঁকি হচ্ছে, চিকিৎসার ব্যয়ও বাড়ছে। 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে এবং বাজারে অভিযান অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

আইনি কাঠামো এবং দায়-দায়িত্ব : ২০২৩ সালে পার্লামেন্টে “ওষুধ ও কসমেটিকস বিল” পাস করা হয়েছে, যা পুরাতন আইন (ড্রাগস অ্যাক্ট ১৯৪০ ও ১৯৮২-এর সংশ্লেষ) প্রতিস্থাপন করেছে। এই আইন অনুসারে কসমেটিকস নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর (DGDA))-কে দেয়া হয়েছে।  ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩”-এ ভেজাল কসমেটিকসের জন্য দায়ের সুস্পষ্ট প্রভিশন আছে- যদি কেউ নকল কসমেটিকস উৎপাদন, বিক্রি, মজুদ বা প্রদর্শন করে, তাহলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার জরিমানা বা উভয় হতে পারে। এছাড়া, যদি কসমেটিকস adulterated (অশুদ্ধ, মানহীন) হয়, তদনুযায়ীও সাজা হতে পারে - সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা। আইন অনুযায়ী ‘misbranded cosmetics’ (যে পণ্যগুলোর লেবেল/ব্র্যান্ডিং মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর) উৎপাদন বা বিক্রি করলেও দায় আছে। আইন শুধুমাত্র শাস্তির দিকেই লক্ষ্য রাখে না, বরং প্রশাসনিক দায়িত্বও দেয়: অনুমোদন, নিবন্ধন, লেবেলিং ও মান নিয়ন্ত্রণে উএউঅ-র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

দায় কার? : ভেজাল কসমেটিকসের ক্ষেত্রে দায় একাধিক স্তরে বিভক্ত। উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক- যারা ভেজাল বা নিম্নমানের কসমেটিকস উৎপাদন করছে বা আমদানি করছে  তারা সরাসরি দায়ী। কারণ তারা বৈধ অফিসিয়াল প্রক্রিয়া অবলম্বন না করে আইন লঙ্ঘন করছে। তাদের বিরুদ্ধে নতুন আইন অনুযায়ী দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা যেতে পারে। যারা অবৈধ উৎস থেকে পণ্য কিনে বাজারজাত করছে, তাদেরও আইনগত দায় আছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলেছে, বাজার সমিতি বা দোকান যেখানে ভেজাল পণ্য বিক্রি হচ্ছে, সেক্ষেত্রে দোকান বা মার্কেট সমিতিকেও দায়ের আওতায় আনা যেতে পারে। 

DGDA (ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর): নতুন আইন অনুযায়ী, তাদের প্রধান দায়িত্ব লেগেছে কসমেটিকসের মান নিয়ন্ত্রণ, অনুমোদন, রেগুলেশন। BSTI (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন): যদিও পূর্বে তাদের পরীক্ষার এবং সার্টিফিকেশনের ভূমিকা ছিল, নতুন আইন অনুসারে কিছু ক্ষমতা রূপান্তরিত হয়েছে, তবে তারা মাননিয়ন্ত্রণ এবং অভিযানে গতিশীল ভূমিকা রাখে। 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর : তাদের দায়িত্ব আছে ভোক্তাদের অধিকার রক্ষা করা এবং ভেজাল পণ্যের বিপণন ও বিক্রির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।

যদিও আইনগত দায় মূলত উৎপাদন ও বিক্রেতার ওপর, ভোক্তারাও সচেতনতা বৃদ্ধি করে দায়শীল ভূমিকা নিতে পারে। ভোক্তা যদি নিরাপদ উৎস থেকে পণ্য না কিনে অবৈধ বা নকল পণ্যে লাভবান মনে করে, তাহলে ঘটনা আরও বাড়তে পারে। অনলাইন বিক্রয় ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভেজাল পণ্যের প্রচার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যেমন, কিছু গ্রুপ ভেজাল বিদেশি প্রসাধনী পণ্য অনলাইনে বিক্রি করে ধরা পড়েছে। ভোক্তারা প্রায়শই ‘সস্তা দাম’কে বেশি গুরুত্ব দেয়, যা নকল পণ্যের বাজারকে উজ্জীবিত করে। দায় মূলত উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও বিক্রেতার ওপর, কারণ তারা ভেজাল বা নিম্নমানের কসমেটিকস বাজারে নিয়ে আসে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা (DGDA, BSTI), আইনগতভাবে শক্ত দায় নির্দেশিকা পেয়েছে “ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩”-এর মাধ্যমে। তবে আইনের সাফল্য নির্ভর করবে কীভাবে কার্যকরভাবে আইন প্রয়োগ করা হয়, ভোক্তা সচেতনতা এবং নিয়মিত তদারকি বজায় রাখা যায়। একমাত্র শাস্তি না, বরং সমন্বিত পদক্ষেপ (নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা, আইন প্রয়োগ) গ্রহণ করলেই ভেজাল কসমেটিকসের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

এনএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর