Logo

আইন ও বিচার

হিন্দু বিবাহ

ধর্ম, আইন ও সামাজিক বাস্তবতার সমন্বয়

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৯

ধর্ম, আইন ও সামাজিক বাস্তবতার সমন্বয়

হিন্দু বিবাহ শুধুই দুটি মানুষের মিলনের অনুষ্ঠান নয়; এটি একে সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের মধ্যে রাখে। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য বিবাহের প্রথা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। তবে আধুনিক আইন ও সামাজিক বাস্তবতা বিবেচনা করলে দেখা যায়, এই প্রথা শুধু ধর্মীয় আচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোর সঙ্গে মেলাতে হয়।

হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী বিবাহ হলো পুণ্য এবং সামাজিক বাধ্যবাধকতা। আচার ও রীতিনীতি অনুযায়ী, বিয়ে সম্পন্ন করতে অগ্নি সাক্ষী এবং সপ্তপদী (সাত পাক) গুরুত্বপূর্ণ। কন্যাদান ও পাত্র-পক্ষের সম্মতিও এই অনুষ্ঠানের অংশ। ধর্মীয় বিশ্বাসে, এই আচারগুলো বিয়েকে বৈধ ও পূর্ণতা প্রদান করে। হিন্দু বিবাহে মুসলিম সমাজের দেনমোহর বা কাবিন-এর মতো বাধ্যতামূলক আর্থিক লেনদেন নেই। তবে উপহার বা সাধারণ উপকরণের মাধ্যমে দম্পতির ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচলন আছে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে গণ্য হয়।

আইনগত দিক: বাংলাদেশে হিন্দু বিবাহ

বাংলাদেশে হিন্দুদের জন্য হিন্দু বিবাহ আইনগতভাবে স্বীকৃত। Hindu Marriage Registration Act ২০১২ (প্রযোজ্য ২০০৭ সাল থেকে) অনুযায়ী, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়, তবে ইচ্ছুক দম্পতি নিবন্ধনের মাধ্যমে আইনগত স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে পারে। নিবন্ধন না থাকলে আইনি প্রমাণ এবং সম্পত্তি বা উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

আইন অনুযায়ী হিন্দুদের মধ্যে ছেলে ২১ বছর, মেয়ে ১৮ বছর পূর্ণ হলে বিয়ে করতে পারে। এছাড়া, হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ করতে পারে, যা সামাজিক ও আইনিভাবে স্বীকৃত। তবে, প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ের ক্ষেত্রে পরিবারিক সম্মতি ধর্মীয় দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ হলেও আইনের দৃষ্টিতে বাধ্যতামূলক নয়। বাংলাদেশে হিন্দু বিবাহ আইন ডিভোর্স বা বিচ্ছেদের সুযোগ সীমিত রাখে। স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যু ছাড়া আইনগত বিচ্ছেদ নেই। ফলে, সামাজিকভাবে সমস্যা থাকলেও আইনি বিচ্ছেদ সম্ভব হয় না।

সামাজিক বাস্তবতা এবং চ্যালেঞ্জ :

হিন্দু বিবাহ শুধু ব্যক্তিগত দম্পতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি পরিবারের সম্মান, সামাজিক অবস্থান এবং সম্প্রদায়ের নৈতিক মানদণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু বর্তমান সমাজে দেখা যাচ্ছে- প্রথা ও আধুনিকতার মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। হিন্দু বিবাহ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ধর্মীয় আচার যেমন- সপ্তপদী, অগ্নিসাক্ষী- বিয়েকে পূর্ণতা দেয়, সেই সঙ্গে সামাজিক ও নৈতিক বাধ্যবাধকতার প্রতিফলন ঘটে। তবে আইনগতভাবে বিবাহের নিবন্ধন, বৈধতা, পুনর্বিবাহ ও সন্তানদের অধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সমাজ ও পরিবারে নৈতিকতা, আইন ও আধুনিক বাস্তবতা একত্রিত না হলে, হিন্দু বিবাহের উদ্দেশ্য এবং তাৎপর্য পূর্ণতা পায় না।

সুতরাং, ধর্ম, আইন এবং সামাজিক বাস্তবতার সমন্বয়ই হিন্দু বিবাহকে সমৃদ্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী করে। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য এখন সময় এসেছে- পরম্পরা ও আধুনিকতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা, যাতে বিবাহ কেবল ধর্মীয় আচার নয়, সামাজিক ও আইনি নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবেও শক্তিশালী হয়।

এনএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর