Logo

আইন ও বিচার

গুম ও নির্যাতনের মামলা

শেখ হাসিনার আইনজীবী হলেন আমির হোসেন, পান্না চাইলেন নিঃশর্ত ক্ষমা

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:০১

শেখ হাসিনার আইনজীবী হলেন আমির হোসেন, পান্না চাইলেন নিঃশর্ত ক্ষমা

আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে মো. আমির হোসেনকে নিয়োগ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১। 

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেল এই নির্দেশ দেন।

এর আগে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জেড আই খান পান্না নিজেকে এই মামলা থেকে প্রত্যাহারের আবেদন করলে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়। শুনানির একপর্যায়ে হুইলচেয়ারে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে তিনি জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে আর দাঁড়াতে চান না। একইসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের কাছে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চান।

ট্রাইব্যুনাল তাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার ক্লায়েন্ট হাজির হননি, আপনিও আসেননি। আপনি স্বেচ্ছায় পক্ষে দাঁড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এ অবস্থায় প্রত্যাহার চাইলে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়েই জানাতে হবে। পাশাপাশি তারা পান্নাকে স্মরণ করিয়ে দেন, এক ভিডিও বার্তায় তিনি দাবি করেছিলেন যে তার ক্লায়েন্ট এই আদালত মানেন না; ফলে তিনিও মানেন না। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে তার ব্যাখ্যা চান।

পান্না তার জবাবে বলেন, আমি আনকনডিশনাল অ্যাপোলজি চাই। পরে ট্রাইব্যুনাল তাকে পুনরায় জানতে চায় তিনি কি শেখ হাসিনার পক্ষে যুক্ত থাকতে চান কি না। উত্তরে তিনি ‘না’ বলেন। এরপর তার স্থলে মো. আমির হোসেনকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আমির হোসেন অতীতেও শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই করেছেন।

এদিন দুপুর পৌনে ১২টায় মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি শুরু হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম যুক্তি উপস্থাপন করেন। শুনানিতে প্রসিকিউটরদের পাশাপাশি আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মোট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল–১। তাদের মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা।

গ্রেপ্তার হওয়া ১০ সেনা কর্মকর্তা হচ্ছেন— র‌্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটি), র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।

পলাতক আসামির তালিকায় রয়েছেন— সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র‌্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও র‌্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।

১১ অক্টোবর সেনাবাহিনী জানান, এ দুই মামলার ৩০ আসামির মধ্যে কর্মরত ১৫ কর্মকর্তাকে তারা হেফাজতে নিয়েছেন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১২ অক্টোবর ঢাকার সেনানিবাসের এমইএস ভবন নম্বর ৫৪–কে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে গ্রেপ্তার কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে।

মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য গত ২৩ নভেম্বর আজকের দিন ধার্য করা হয়েছিল। ওই দিন শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন জেড আই খান পান্না, যার পর তাকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে তিনি নিজেই সেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন এবং নতুন করে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে নিঃশর্ত ক্ষমা চান ট্রাইব্যুনালের কাছে।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর