সুপ্রিম কোর্ট দিবস : সংবিধান, বিচারিক স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের প্রতীক
অ্যাড. কেএম খায়রুল কবীর
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৪
একটি রাষ্ট্রের প্রকৃত শক্তি তার অস্ত্রভাণ্ডারে নয়, বরং তার বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ও কার্যকারিতায় নিহিত। সেই বিচারব্যবস্থার সর্বোচ্চ অভিভাবক হলো সুপ্রিম কোর্ট। বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে তাই ১৮ ডিসেম্বর কোনো সাধারণ তারিখ নয়; এটি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক যাত্রার এক মৌলিক মাইলফলক। এই দিনটি পালিত হয় সুপ্রিম কোর্ট দিবস হিসেবে- আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার স্মারক হিসেবে।
সুপ্রিম কোর্ট দিবস হলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিচারিক প্রতিষ্ঠান- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার দিনকে স্মরণ করার উপল। এই দিনে বিচার বিভাগ তার সাংবিধানিক দায়িত্ব, অর্জন, সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আত্মমূল্যায়নের সুযোগ পায়।
এটি কোনো আনুষ্ঠানিক ছুটির দিন না হলেও, আইন অঙ্গন, বিচার বিভাগ ও সংবিধান সচেতন নাগরিকদের কাছে দিনটির গুরুত্ব গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ।
কেন ১৮ ডিসেম্বর পালন করা হয় :
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিচারিক কাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু হয় অত্যন্ত সীমিত সময় ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রণীত হয় বাংলাদেশের সংবিধান। ১৮ ডিসেম্বর এ দিনেই প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্ট তার বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে।
এই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণেই ১৮ ডিসেম্বর পালন করা হয় সুপ্রিম কোর্ট দিবস। অর্থাৎ, এই দিনটি শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের জন্মদিন নয়; এটি সংবিধানের কার্যকর প্রয়োগের সূচনাদিবস। বিচারিক স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে এই দিবস।
সুপ্রিম কোর্ট দিবস মূলত স্মরণ করিয়ে দেয়- বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের অধীন নয়, ন্যায়বিচার রাজনৈতিক সুবিধার ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না। আদালতই শেষ আশ্রয়স্থল। বিশেষ করে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের (২০০৭) পর এই দিবসের তাৎপর্য আরও বেড়েছে। এটি বিচারকদের মনে করিয়ে দেয়, তারা কেবল আইন প্রয়োগকারী নন, বরং ন্যায় ও সংবিধানের প্রহরী।
সুপ্রিম কোর্ট দিবস তাই কেবল বিচারকদের নয়, নাগরিকদের অধিকার-চেতনার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
সুপ্রিম কোর্ট দিবস কেবল একটি স্মরণিকা নয়; এটি একটি নৈতিক ও সাংবিধানিক অঙ্গীকার। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় আইন শক্তিশালী হতে হবে, কিন্তু ন্যায়হীন নয়। বিচার স্বাধীন হতে হবে, কিন্তু দায়িত্বহীন নয়।
সংবিধান কাগজে নয়, বাস্তবে কার্যকর হতে হবে। ১৮ ডিসেম্বর তাই শুধু অতীতের স্মৃতি নয়; এটি আইনের শাসনের ভবিষ্যৎ রার প্রতিশ্রুতির দিন।
বিকেপি/এমবি

