Logo

আইন ও বিচার

ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর ও রেকর্ড : ডিজিটাল আইনের ভিত্তি কতটা শক্ত?

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২৬

ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর ও রেকর্ড : ডিজিটাল আইনের ভিত্তি কতটা শক্ত?

ডিজিটাল শাসনব্যবস্থা ও ই-সেবার বিস্তারে কাগজভিত্তিক ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রনিক লেনদেন এখন বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে আইনি স্বীকৃতি দিতেই বাংলাদেশে প্রণীত হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬। আইনটির অন্যতম মৌলিক ভিত্তি হলো ইলেকট্রনিক রেকর্ড ও ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর- কে বৈধতা প্রদান, যাতে ডিজিটাল লেনদেন আদালত ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে গ্রহণযোগ্য হয়।

আইন অনুযায়ী, যেকোনো তথ্য, নথি, চুক্তি বা যোগাযোগ যদি ইলেকট্রনিক আকারে সংরক্ষিত বা প্রেরিত হয়, তবে তা ইলেকট্রনিক রেকর্ড হিসেবে গণ্য হবে। কেবল ইলেকট্রনিক হওয়ার কারণে কোনো নথির আইনগত বৈধতা অস্বীকার করা যাবে না- এটি আইনের একটি যুগান্তকারী দিক। এর ফলে ই-গভর্ন্যান্স, অনলাইন ব্যাংকিং, ই-কমার্স ও ডিজিটাল সেবার জন্য একটি আইনি ভিত্তি তৈরি হয়েছে। একইভাবে, আইনটি ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর- কে হাতে লেখা স্বাক্ষরের বিকল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর কোনো নথির প্রামাণিকতা, স্বাক্ষরকারীর পরিচয় ও সম্মতির প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। আরও এক ধাপ এগিয়ে আইনটি নিরাপদ ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর- এর ধারণা প্রবর্তন করেছে, যেখানে নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি, এনক্রিপশন ও সার্টিফিকেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বাক্ষরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। 

তবে বাস্তবে এই বিধানগুলোর প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। নিরাপদ ইলেকট্রনিক স্বাক্ষরের জন্য যে সার্টিফিকেশন অথরিটি, প্রযুক্তিগত মান ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর প্রয়োজন, তা এখনো পর্যাপ্তভাবে কার্যকর ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখনও কাগজ ও হাতে লেখা স্বাক্ষরের ওপর নির্ভরশীল, ফলে আইনের সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আইনের আনুষঙ্গিক দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিক রেকর্ড সংরক্ষণ, প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা, দায় ও দণ্ডের বিধান। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা ও মানদণ্ডের অভাব অনেক সময় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে আদালতে ইলেকট্রনিক রেকর্ডের গ্রহণযোগ্যতা, এর অখণ্ডতা (integrity) ও সত্যতা যাচাইয়ের বিষয়ে সমন্বিত নির্দেশনা এখনো প্রয়োজন।

এছাড়া দ্রুত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইনটির সংশোধন ও হালনাগাদ না হওয়াও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সাইবার নিরাপত্তা, তথ্য সুরক্ষা ও ডিজিটাল পরিচয় যাচাই- এসব বিষয় ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর ও রেকর্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, কিন্তু আইনি কাঠামো এখনও অনেক ক্ষেত্রে খণ্ডিত।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের স্বার্থে সময়ের দাবি হলো- প্রথমত, নিরাপদ ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর ব্যবস্থার জন্য কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য অবকাঠামো গড়ে তোলা। দ্বিতীয়ত, সরকারি ও বিচারিক ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক রেকর্ড ব্যবহারে একক ও স্পষ্ট মানদণ্ড প্রণয়ন। তৃতীয়ত, সার্টিফিকেশন অথরিটি ও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক কাঠামোর স্বচ্ছতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি।

চতুর্থত, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনের নিয়মিত পর্যালোচনা ও হালনাগাদ।

ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর ও রেকর্ড কেবল প্রযুক্তিগত সুবিধা নয়, এটি একটি আস্থার বিষয়। সেই আস্থা গড়ে তুলতে হলে আইন, প্রযুক্তি ও প্রয়োগ—এই তিনের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় অপরিহার্য। নইলে ডিজিটাল লেনদেনের আইনি ভিত্তি দুর্বলই থেকে যাবে, আর ডিজিটাল রাষ্ট্রের স্বপ্নও অপূর্ণ রয়ে যাবে।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর