গ্যাসের জন্য হাহাকার : বৈরী আবহাওয়া আর অব্যবস্থাপনায় নাকাল দেশ

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৯

ছবি : সংগৃহীত
গ্যাস সংকটে নাকাল গোটা দেশ। রান্নাঘর থেকে হোটেল-রেস্ট্রুরেন্ট, ফ্যাক্টরি থেকে ফিলিং স্টেশন, কোথাও নেই গ্যাস। এরইমধ্যে বৈরী আবহাওয়ায় এলএনজি আমদানি ও খালাসে বিঘ্ন ঘটায় পরিস্থিতি হয়ে উঠছে আরও জটিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধানে এলএনজির নতুন উৎস খুঁজে বের করা ছাড়া উপায় নেই।
জানা গেছে, দেশের গ্যাস সরবরাহের একটি বড় অংশ আসে মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে। কিন্তু সামান্য বৈরী আবহাওয়াতেই এ টার্মিনালের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে এলএনজি খালাসে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে জাতীয় গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায়।
এতে ঢাকার অনেক এলাকায় দিনের বেলায়ও গ্যাসের দেখা মেলে না। অনেক পরিবার মাঝরাতে উঠে খাবার রান্না করে রাখছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে আছেন আগারগাঁও, মিরপুর-১২, পল্লবী, খিলগাঁও, ফার্মগেট, হাতিরপুল ও রামপুরা এলাকার বাসিন্দারা। বাধ্য হয়েই অনেকে মাটির চুলার ওপর নির্ভর করছেন, অথচ সেই লাকড়ির দামও এখন ১৫-২০ টাকা কেজি।
রামপুরা অঞ্চলের ক্ষুব্ধ গৃহিণী সেলিনা আক্তার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দিনে গ্যাস আসে না। রাতে ৩টায় উঠে রান্না করতে হয়। এতেও ঠিকমতো হয় না। অথচ মাস শেষে বিল ঠিকই দিতে হয়।
এদিকে গাড়িচালকরাও পড়েছেন বিপাকে। ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ নেই বললেই চলে। চালকরা বলছেন, ১৫০ PSI প্রেসারে গ্যাস নিয়ে গাড়ি চলাতে হয়, যেটা নিরাপদও না কার্যকরও না। একাধিকবার লাইনে দাঁড়াতে হয়, কোথাও কোথাও ২-৩ ঘণ্টা পর্যন্ত।
যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় ফাতেমা নাজ পেট্রল পাম্পে সিএনজি চালক জলিল শেখ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, একবারে ট্যাঙ্ক ভরছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, তাও গ্যাস ঠিকমতো মিলছে না।
গ্যাস সংকটে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে শিল্প খাতও। টেক্সটাইল, সিরামিক, পেপারসহ বিভিন্ন শিল্পে উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে রফতানি ও অভ্যন্তরীণ বাজারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গ্যাস সংকটের নেপথ্যে একদিকে যেমন বৈরী আবহাওয়া দায়ী, তেমনি সরকারি অব্যবস্থাপনাও বড় কারণ। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, সবকিছু বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মানুষ বেশি দামে গ্যাস কিনছে। অথচ সংকট কমছে না। এর জন্য দায়ী সরকারি সংস্থাগুলোর অব্যবস্থা ও অবহেলা। সমস্যা সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে এলএনজির নতুন উৎস খুঁজে বের করা উচিত।