সরকার নাগরিকদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না : ড. ইউনূস

ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৪

ছবি : সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেছেন। এ সময় দুর্গাপূজার আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেছেন, কোনো সরকার নাগরিকদের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অধিকার রাখে না।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসন্ন দুর্গাপূজার প্রস্তুতি পরিদর্শন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি মনে করেন, পুরো বাঙালি জাতি একটি বড় পরিবার। সরকারের দায়িত্ব হলো সব নাগরিকের সমান অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা। তাছাড়া, অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর তার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যাওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, পূজার সময় ঢাকায় না থাকার কারণে ভেতরে ভেতরে আক্ষেপ থাকলেও মন্দিরে গিয়ে তিনি শান্তি পেয়েছেন।
সবাই এ দেশের নাগরিক, কারও প্রতি বৈষম্য করা হবেনা বলেও আশ্বাস দেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন, নিজেকে মনে করিয়ে দিন, আপনি এই দেশের নাগরিক, এবং আপনাকে সংবিধান প্রদত্ত অধিকার ও মর্যাদা অবশ্যই দিতে হবে।
ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, পূজার আনন্দ উপভোগ না করতে পারার আশঙ্কায় তিনি আগেভাগেই সেখানে গেছেন।
এর আগে, সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুর্গাপূজা ঘিরে যেন কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
তার আগে, সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হিন্দু নেতারা।
সে সময় প্রধান উপদেষ্টাকে আসন্ন দুর্গাপূজার মণ্ডপগুলোতে যেতে আমন্ত্রণ জানান বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
এ সময় তাদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা।
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তারা আশা করছেন।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এজন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’
এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের সহায়তায়। অন্য একটি মন্দিরে বাথরুমের সিঁড়ি তৈরি হচ্ছে। আমরা অসচ্ছল মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা ও দরিদ্র বিধবা ও এতিমদেরও সহায়তা দিচ্ছি।
এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : ইউএনবি
এএ