জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস আজ
সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৩

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
আজ ২২ অক্টোবর, জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য— ‘মানসম্মত হেলমেট ও নিরাপদ গতি, কমবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি’। ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর সরকারিভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দেশজুড়ে আজও পালিত হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচি—র্যালি, আলোচনা, সচেতনতামূলক সভা ও মানববন্ধন। কিন্তু এত বছর ধরে নানা কর্মসূচি পালন করেও সড়কে দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে প্রাণহানি— থামছে না সড়কে মৃত্যুর মিছিল।
‘পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়’—এই স্লোগান থেকেই ৩২ বছর আগে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল নিরাপদ সড়কের আন্দোলন। ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর চট্টগ্রামের চন্দনাইশে সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যুর পর থেকে তিনি এই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। তাঁর উদ্যোগেই গড়ে ওঠে সামাজিক সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’, যার ধারাবাহিকতায় সরকার ২০১৭ সালে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুসারে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, এতে প্রাণ হারান ২৭ জন এবং আহত হন ৩৮ জন। ২০২২ সালে দেশে মোট ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯ হাজার ৯৫১ জন এবং আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৩৫৬ জন। দুর্ঘটনার ২৮ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে, ২৪ শতাংশ মোটরসাইকেলে এবং ১৪ শতাংশ বাসে ঘটে।
বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) জানায়, সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত ট্রিপ, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, নজরদারির অভাব এবং চালকদের অদক্ষতা। অনেক চালক যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়াই গাড়ি চালান এবং অনেকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার, মাদক গ্রহণ, ক্লান্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোসহ নানা কারণেও দুর্ঘটনা বাড়ছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, দেশের সড়ক ও মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এ প্রচেষ্টা সফল করতে প্রশাসনের পাশাপাশি চালক, পরিবহন মালিক ও যাত্রীদেরও সচেতনতা প্রয়োজন।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েট অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের সড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে শৃঙ্খলাই প্রধান নিয়ামক। কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা বলতে এখন কিছুই নেই। চালকের দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, গাড়ির মান ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা— সবকিছুতেই ঘাটতি রয়ে গেছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে নিরাপত্তা ফেরাতে প্রথমেই প্রয়োজন চালকদের মানোন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি গণপরিবহন খাতে আধুনিকীকরণ, রুট রেশনালাইজেশন ও আইন প্রয়োগে কঠোরতা আনতে হবে। সচেতনতা ও প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি বাড়াতে পারলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কমানো সম্ভব।
এমএইচএস