Logo

জাতীয়

৮০০ বছর ধরে শক্তি জমছে নরসিংদীতে, হতে পারে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ২০:৪৮

৮০০ বছর ধরে শক্তি জমছে নরসিংদীতে, হতে পারে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর

নরসিংদীর মাধবদীতে হওয়া শুক্রবারের ভূমিকম্পে শুধু ঢাকাই নয়, কেঁপে উঠেছিল পুরো দেশ। সেই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের মৃত্যু এবং পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভূমিকম্প ছিল একটি বড় সতর্কবার্তা— যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, নরসিংদী অঞ্চলসহ পূর্ব বাংলাদেশে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার বিধ্বংসী ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় ৭ কোটি মানুষ শুক্রবারের ভূমিকম্পে হালকা বা মাঝারি ঝাঁকুনি অনুভব করেছেন। ঢাকা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মাধবদীতে মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তিস্থল— মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্পটিকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে উল্লেখ করেছে আবহাওয়া বিভাগ।

এরপর শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে একই জেলার পলাশ উপজেলায় আবারও রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির।

কেন হলো এই ভূমিকম্প? 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, মাধবদীর ভূমিকম্পের মূল কারণ ভূগর্ভে ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মিজ প্লেটের অবস্থান পরিবর্তন। প্লেট দুটি সাপেক্ষে নড়াচড়া করছে, ফলে ভূগর্ভে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এটি খুব পরিষ্কার যে আমাদের এই সেগমেন্ট— সিলেট থেকে চট্টগ্রাম ও টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত সাবডাকশন জোন— অত্যন্ত ভয়ংকর। এই জোনে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের মতো শক্তি জমে আছে। সেই শক্তি বের হতেই হবে।’

মাধবদীতে ভূমিকম্প হওয়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নরসিংদী অঞ্চলে ভারতীয় প্লেট পূর্ব দিকে এগিয়ে গিয়ে বার্মা প্লেটের নিচে ঢুকে যাচ্ছে। সেখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। শুক্রবার সেই লকড অংশের খুব ক্ষুদ্র অংশ খুলেছে মাত্র। এর অর্থ হলো— সামনে আরও বড় শক্তি বের হয়ে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’

৮০০ বছর ধরে শক্তি জমছে
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে প্রায় ৮০০ বছর ধরে শক্তি জমছে। অধ্যাপক আখতার বলেন, ‘এই শক্তি বের হবেই। মাধবদীর ভূমিকম্প আমাদের সামনে একটি বড় সতর্কবার্তা দিয়েছে। এত বড় একটি প্লেট বাউন্ডারির ক্ষুদ্র অংশ খুলে যাওয়া মানে সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। ঢাকার অপরিকল্পিত নগরায়ন বড় ধ্বংসের ঝুঁকি তৈরি করেছে।’

বাংলাদেশে কোন কোন ফল্ট ঝুঁকিপূর্ণ
বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্পের দুটি প্রধান উৎস চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা—

১. ডাউকি ফল্ট (ময়মনসিংহ-জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ-সিলেট অঞ্চল), দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ কিমি।
২. সিলেট থেকে চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম-টেকনাফ হয়ে সুমাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত সাবডাকশন জোন।

দুটি অঞ্চলই ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ। নরসিংদীর মাধবদী এই পূর্বাঞ্চলীয় সাবডাকশন জোনেরই অংশ।

ইউএসজিএস বলছে, এই অঞ্চলে ১৯৫০ সালের পর থেকে ৫ দশমিক ৫ মাত্রা বা তার বেশি শক্তির ১৪টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।

ইতিহাসে বড় ভূমিকম্পের নজির

বাংলাদেশ অঞ্চলে অতীতে ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটেছে। যেমন—

– ১৭৯৭ সালের ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্র নদীর গতিপথ বদলে যায়।
– ৭৬২ সালে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে সেন্টমার্টিন দ্বীপ তিন মিটার ওপরে উঠে আসে।
– ১৮৯৭ সালে ডাউকি ফল্টে ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়—যা অঞ্চলের সবচেয়ে বড় কম্পনগুলোর একটি।
– ১৯২২ ও ১৮৬৮ সালে সিলেট–মৌলভীবাজার–কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে ৭.৬ ও ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।

এসব উদাহরণ প্রমাণ করে— দেশে বড় ভূমিকম্প বাস্তব সম্ভাবনা, কল্পনা নয়।

ঢাকার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি
অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার সতর্ক করে বলেন, ‘যদি এখন কোনো বড় ভূমিকম্প হয়, ঢাকা শহর পরিকল্পনাহীন গঠন ও দুর্বল ভবনের কারণে ভয়াবহ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হতে পারে। তাই আর অবহেলা নয়— তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল যেকোনো উৎসেই হোক, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ঢাকায়— ঘনবসতিপূর্ণতা, দুর্বল অবকাঠামো ও জরুরি সেবার সীমাবদ্ধতার কারণে।

  • এসআর/এমএইচএস 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ভূমিকম্প

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর