Logo

জাতীয়

মহান বিজয় দিবস আজ

৩৩৬ জনের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিলের সুপারিশ

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৪

৩৩৬ জনের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিলের সুপারিশ

আজ মহান বিজয় দিবস। জাতি যখন মুক্তিযুদ্ধের বীর সন্তানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে, তখন মুক্তিযোদ্ধা তালিকা যাচাই-বাছাইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তনের তথ্য সামনে এসেছে। ২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ৩৩৬ জনের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিলের সুপারিশ করেছে। এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় অনেকের গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

জামুকা জানায়, বেসামরিক, ভারতীয় তালিকা, লাল মুক্তিবার্তা, আনসার বাহিনী, সেনাবাহিনী ও শহীদ পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন গেজেটে অন্তর্ভুক্ত থাকা এসব ব্যক্তিকে যাচাই-বাছাই করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত পাওয়া যায়নি। একই সময়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হওয়ায় ৮৪ জনকে নতুন করে গেজেটভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২৮ জনকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে গেজেটভুক্ত করার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

২০২০ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যাঁদের নাম ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তায় রয়েছে, তাঁদের আর যাচাইয়ের আওতায় আনা হবে না। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জামুকার শুনানি ও তদন্তে দেখা গেছে, এই তালিকাগুলোর মধ্যেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধা নন।

গত বছরের ২৪ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জামুকার ৯১তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর এখন পর্যন্ত মোট ১১টি সভায় বিভিন্ন বাহিনী ও বেসামরিক শ্রেণিতে গেজেট বাতিল, পরিবর্তন ও অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব সভায় পুলিশ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ৪৭ জন, শহীদ পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ছয়জন এবং সেনাবাহিনীর একজনকে গেজেটভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি বাহিনী ও শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য ১৬ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘অভিযোগ, আদালতের রায়, সংশোধন ও আপিলের ভিত্তিতেই যাচাই-বাছাই চলছে। তাঁর ভাষায়, যাচাই হওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ৯০ শতাংশই অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে আগামী এক বছরের মধ্যে তালিকা অনেকটাই নির্ভুল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।’

চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর জামুকার ১০০তম সভায় এককভাবেই ১৭৫ জনের গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। পরের ১০১তম সভায় আরও অন্তত ৭১ জনের নাম বিভিন্ন তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এতে লাল মুক্তিবার্তা ও ভারতীয় তালিকা থেকেও নাম বাদ পড়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে।

ফারুক-ই-আজম জানান, ‘ভারতীয় তালিকা একাধিক রয়েছে। প্রথম তালিকাটি নির্ভরযোগ্য হলেও পরবর্তী তালিকাগুলোর অনেকগুলোই বিতর্কিত ও আংশিকভাবে ভুয়া। অভিযোগ থাকলে ভারতীয় তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও জামুকার যাচাই করার এখতিয়ার রয়েছে।’

জামুকার মহাপরিচালক শাহিনা খাতুন বলেন, ‘অন্তত পাঁচ ধরনের ভারতীয় তালিকা পাওয়া গেছে, যার সবগুলো সমানভাবে নির্ভরযোগ্য নয়। সাম্প্রতিক শুনানিতে এসব তালিকা থেকেই একাধিক ব্যক্তির নাম বাদ পড়েছে।’

এদিকে চলতি বছরের জুনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা সংশোধন করে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন অধ্যাদেশ জারি করে। সংশোধিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধকারীরাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী-কলাকুশলী, বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করা ব্যক্তিসহ অনেককে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে আলাদা শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জামুকার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, যাচাই-বাছাই ও আপিল নিষ্পত্তিতে এখন পর্যন্ত ৬৪৩ জন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হননি। একই সঙ্গে ২৮ জনকে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে গেজেটভুক্ত করার সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক আফসান চৌধুরী বলেন, ‘তালিকা বিতর্কের বাইরে গিয়ে এখন একাত্তরের তথ্যভিত্তিক ইতিহাস চর্চায় আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।’

এনএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মুক্তিযুদ্ধ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর