ছবি : বাংলাদেশের খবর
ভোরের আলো ফোটার আগেই সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় নামে মানুষের ঢল। কুয়াশাভেজা হাওয়ার মধ্যে লাল-সবুজের পতাকা হাতে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন বয়সী মানুষ— শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা। একে একে বেদির দিকে এগিয়ে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধের বেদি।
এ জনসমাগম যেন ৫৫ বছর পরও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি মানুষের কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার নিদর্শন। শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পৌঁছে দেওয়ার এক নীরব আয়োজনও ছিল এটি। ফুলে রাঙানো বেদির সামনে অনেককেই নীরবে মাথা নত করে থাকতে দেখা যায়। কেউ সন্তানকে কোলে নিয়ে শহীদদের গল্প শোনান, কেউ চোখ বন্ধ করে প্রার্থনায় মগ্ন হন।
সকালে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও বাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলো শ্রদ্ধা জানায়। দলবেঁধে আসা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে শোনা যায় দেশাত্মবোধক গান। হাতে আঁকা পোস্টার ও লাল-সবুজের ব্যানারে উঠে আসে স্বাধীনতার বার্তা— ‘শহীদদের ঋণ শোধ হয় না’।
দিনভর নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। ভিড় বাড়লেও পরিবেশ ছিল শান্ত ও সুশৃঙ্খল।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শাহীন আহমেদ বলেন, প্রতি বছরই চেষ্টা করি এখানে আসার— সন্তানদের চোখের সামনে ইতিহাসটা জীবন্ত করে তুলতে। তার স্ত্রী সালমা আক্তার বলেন, শহীদদের কথা বইয়ে পড়া এক জিনিস, এখানে এসে অনুভব করা আরেক জিনিস।
ফুল দিতে আসা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান বলেন, অনেক সঙ্গীকে হারিয়েছি। ফুল দিতে এলে মনে হয় তারা এখনও আমাদের সঙ্গেই আছে। কথা বলতে বলতে তার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে।
শিশু-কিশোরদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই প্রথমবার স্মৃতিসৌধে এসেছে। অভিভাবকেরা তাদের বোঝান কেন এই জায়গাটি গুরুত্বপূর্ণ। এই ফুলগুলো কেবল সৌন্দর্যের জন্য নয়, কৃতজ্ঞতার প্রতীক।
দুপুরে রোদ বাড়লেও মানুষের আসা কমেনি। ফুলের স্তূপ আরও ঘন হয়েছে, বেদির চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে রঙিন পাপড়ি। বাতাসে ভেসে আসে দেশাত্মবোধক সুর। কেউ ছবি তুললেও অধিকাংশ মানুষ নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে যান—যেন বলার কথা বলা হয়ে গেছে।
এমবি

