Logo

মতামত

এআই আমাদের সহায়ক, বিকল্প নয়

আবু তালহা রায়হান

আবু তালহা রায়হান

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ১০:২৬

এআই আমাদের সহায়ক, বিকল্প নয়

শৈশবে কাঁচা হাতের রোজনামচা, জোড়াতালির টুকরো বাক্য, আর কৈশোরে দুরন্তপনার সাহসী পঙক্তি— তারুণ্যে এসে রূপ নেয় কবিতা কিংবা গল্পের অবয়বে। এভাবে বিন্দু থেকে মহাসমুদ্রে পরিণত হওয়া সত্তাকে আমরা লেখক বলি। কিন্তু হাল যামানায় লেখক হওয়ার গল্প যেন ‘হাতের ময়লা’— মিনিট দুয়েকের কাজ! এখানে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে পারদর্শী প্রতিজনই যেন একেকজন কবি-গল্পকার।

এআই জাদুতে মুহূর্তেই লিখে ফেলছেন কবিতা-গল্প কিংবা সমসাময়িক নিবন্ধ-কলাম। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনটা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে প্রকৃত লেখকদের সংখ্যা কমে যাবে। একটি ভঙ্গুর প্রজন্ম তৈরি হবে—যারা হাতে-কলমে কোনোকিছু লিখতে পারবে না। নিজস্ব চিন্তাশক্তি ও বোধহীনতায় ভুগবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে কথা বলেছেন সময়ের আলোচিত তিন লেখক-সাংবাদিক। মতামত তুলে ধরেছেন আবু তালহা রায়হান

এআই আমাদের সহায়ক, বিকল্প নয়
চ্যাটজিপিটি ও অন্যান্য এআই টুলস নিঃসন্দেহে লেখালেখির প্রক্রিয়াকে সহজতর করেছে। তবে এগুলো লেখকের মৌলিক চিন্তা, অনুভব ও সৃজনশীলতার বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। এআই মূলত বিদ্যমান তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্ধারিত কাঠামোয় লেখা প্রস্তুত করে, এতে নতুন চিন্তা বা স্বকীয়তার বিকাশ ঘটে না।

তাই একমাত্র এআই-নির্ভরতা আমাদের সৃজনশীলতা, স্বাতন্ত্র্য ও মৌলিকতা হারিয়ে ফেলার পাশাপাশি লেখকসত্তারও মৃত্যু ঘটাতে পারে। অবশ্য এআই টুলস সঠিকভাবে ব্যবহার করলে তা আমাদের সহায়ক হয়ে উঠতে পারে—যেমন খসড়া লেখায়, ব্যাকরণ সংশোধন বা তথ্য সংগ্রহে। কিন্তু চূড়ান্ত লেখায় আমাদের নিজস্ব স্টাইল, অনুভূতি ও চিন্তার প্রতিফলন থাকা জরুরি।

আমাদের মনে রাখতে হবে, এআই আমাদের সহায়ক—বিকল্প নয়। বরং এআই-এর সহায়তা নিয়ে আমাদের চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতাকে আরও শাণিত করা উচিত।

তোফায়েল গাজালি
সহসম্পাদক, দৈনিক যুগান্তর

এআই’র ব্যবহারে লেখালেখির ক্ষমতা ক্ষীণ হচ্ছে
দিনদিন প্রযুক্তিনির্ভরতার জীবনে হারিয়ে যাচ্ছি আমরা। প্রতিটি মানুষের সঙ্গেই এখন এক একটি অ্যাসিস্ট্যান্ট রোবট আছে। আপনার কর্মময় জীবনকে সহজ করতে যেমন এসব অ্যাসিস্ট্যান্টের উপকারিতা দেখতে পাচ্ছি, ঠিক তেমনি অপকারিতাও কিন্তু কম নয়। সবচেয়ে বেশি আমাদের থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব চিন্তাশক্তির প্রখরতা ও সৃজনশীলতা। বর্তমানে অনেকেই এখন নিজের চিন্তা না খাটিয়ে চ্যাটজিপিটির ওপর নির্ভর করছেন।

শুধু চ্যাটজিপিটিই নয়, এ ধরণের ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের লিস্ট অনেক অনেক লম্বা। চ্যাটজিপিটি ছাড়াও আছে বার্ড (Bard), জেমিনি (Gemini), কলোসিয়ান (Kolosian), ক্যারেক্টার.এআই (Character.ai), ক্লদ (Claude), চ্যাটসন (Chatsonic), ওপেনঅ্যাসিস্ট্যান্ট (OpenAssistant), ফ্রেসলি (Frase)সহ শত শত আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্ট সাইট। এগুলোর ফলে মানুষের নিজস্ব চিন্তা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও লেখালেখির দক্ষতা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে।

আমি মনে করি, প্রয়োজন ছাড়া আমরা এসব সাইট থেকে যত পারি বিরত থাকা উচিত। নিজের দক্ষতার ওপর ভরসা থাকলে তারপরই এআই ব্যবহার করব— যারা দক্ষ হওয়ার আগেই এআইতে ঢুকে যাচ্ছে, তাদের বের হয়ে আসা সত্যিই দুষ্কর। প্রয়োজন ছাড়া এআই থেকে বিরত থাকলেই নিজেদের সৃজনশীলতা টিকিয়ে রাখতে পারব বলে মনে করি। 

মুফতি আব্দুল্লাহ তামিম
জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সময় টিভি

এআই দিয়ে লেখা মানে অন্যের চিন্তা নকল করা
প্রযুক্তির উন্নয়নকে গ্রহণ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তবে এর অপব্যবহার একজন লেখকের মৃত্যু ঘটাতে পারে। এআই অর্থাৎ চ্যাটজিপিটি, জেমিনি ইত্যাদির সুবিধা নিয়ে আমরা আমাদের লেখার প্রুফরিডিং, ভাষার গঠন, লেখার স্টাইল উন্নত এবং লেখার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে পারি।

তবে একটি লেখার আইডিয়া, প্রেক্ষাপট, ঘটনার পরিবেশ, সংলাপ হতে শুরু করে পুরো প্রক্রিয়া প্রযুক্তির হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত না। কেননা প্রযুক্তি কখনোই সৃজনশীল বা মৌলিক কিছু তৈরি করতে পারে না। এর এলগোরিদমে যা সেট করা আছে বা বিভিন্ন সোর্সে যেসব বিষয় প্রকাশিত—শুধু সেগুলোই দেওয়ার ক্ষমতা আছে।

ফলে লেখালেখির পুরো পক্রিয়া এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে সেটি অন্য কারো প্রকাশিত চিন্তা কপি হওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না। তাই লেখালেখিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই লেখকের সৃজনশীলতা ও ব্যক্তিগত কৌশল বজায় রাখতে হবে। লেখকের নিজস্ব চিন্তা, আইডিয়া, চরিত্রের আবেগ-অনুভূতি, অভিব্যক্তি ও ভিন্ন দৃষ্টিকোণ রাখতে হবে। আর এআইকে ব্যবহার করতে হবে সহায়ক টুল হিসেবে।

জনি হোসেন কাব্য
শিশুসাহিত্যিক

  • এটিআর
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর