চারপাশে এখন কেবলই আধুনিকতার ঢেউ। সকালের ঘুম ভাঙা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমরা নানা ভাবে ব্যবহার করছি নানা প্রযুক্তিকে। যোগাযোগ এখন হয়েছে আরো সহজ। চাইলেই পুরো পৃথিবীকে নিয়ে ফেলছি হাতের মুঠোয়। সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন জীবন। পরিবর্তন এসেছে আমাদের প্রায় প্রতিটি কাজ কর্মেই। ধনী থেকে দরিদ্র সমাজের সবার জীবনেই কোন না কোন ভাবে আধুনিকতার প্রভাব লক্ষ করা যায়।
সময়ের সাথে সাথে আধুনিকতার ছোয়ায় বদলে যাচ্ছে আমাদের জীবন তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি এটাই যে সেই সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধনগুলো,হারিয়ে যাচ্ছে পারিবারিক সম্প্রীতি গুলো।সমাজ বিজ্ঞানীরা সব সময়ই বলেন একটা দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পরিবার। তবে সেই প্রতিষ্ঠান এ ভাঙন ধরছে দ্রুতই। বেড়েই চলছে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো সামজিক ব্যধি। বিবাহ বিচ্ছেদ আসলে কি? একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে পরিবার গঠনের লক্ষে সামজিক ও ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যে নির্মল বন্ধন এ আবদ্ধ হয় তখন আমরা সেই পারিবারিক আচার কে বিয়ে বলে থাকি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক তথ্য মতে ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বিচ্ছেদের হার ছিল ০.৬ থেকে ১.১ শতাংশের মধ্যে। ২০২২ সালে এটি বেড়েছে প্রায়ই ১.৪ শতাংশ। এই হার ঢাকার শহরে আরও বেশি। পরিসংখ্যান এ আরো বলা হয়েছে পুরুষের চেয়ে নারীরা বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য বেশি আবেদন করছেন।প্রথম আলোর এক রিপোর্ট এ বলা হয়েছে ঢাকার শহরে প্রতি ৪০ মিনিট এ অন্তত একটি বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন দাখিল হয়েছে।
বিবাহ একটি সামজিক আচার যার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠে নতুন একটি পরিবার। তবে সেই সামজিক আচারই যেন রীতিমতো সামজিক ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। বিবাহ বিচ্ছেদের সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে সমাজে। ভেঙে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন। বিবাহ বিচ্ছেদের কারন খুঁজতে গেলে এর পেছনে বেশ কিছু কারন খুজে পাওয়া যায়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে মানুষের মানসিকতা। ইন্টারনেট এর ছোঁয়ায় আজ তথ্যের অবাধ প্রচলন ঘটছে ফলে ভিন দেশী সংস্কৃতি অতি সহজেই প্রবেশ করছে আমাদের সংস্কৃতিতে। যার সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে আমাদের মানসিকতা।
সেই পাশাপাশি আরো বেশ কিছু কারন উল্লেখ করা যায়।এই যেমন আধুনিকতার এই যুগে আমাদের জীবন হয়ে পড়ছে আরও ব্যস্ত কিন্তুু বদ্ধ বিশেষ করে শহর অঞ্চচল এ তো এই অবস্থা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েই চলছে। আমাদের দেশের শহরগুলোতে বাসার বাইরে বিনোদন এর একমাত্র স্থান হয়ে পড়ছে খাবারের স্টল। ফলে সুষ্ঠ বিনোদন এর অভাবে আমাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ব্যপকভাবে। যার ফলে মেজাজ হচ্ছে খিটখিটে।
কমে যাচ্ছে মানিয়ে নেওয়া ও মেনে নেওয়ার ক্ষমতা যার সরাসরি প্রভাব গিয়ে পড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো সামজিক ব্যাধির পরিসংখ্যান এ। পারিবারিক পবিত্র যে বন্ধন তার গুরুত্ব সামজিক বাস্তবতায় অপরসীম। যে সব দেশে এই পারবারিক বন্ধন দূর্বল সেই সমস্ত দেশের অবস্থার ভয়াবহ অবস্থা তাকালেই বোঝা যায়।
এই যেমন জাপানের মতো সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক দেশেও মারা গিয়ে লাশ পড়ে থাকলেও কেউ খবর রাখে না বলে গণমাধ্যম এ শিরোনাম হতে দেখেছি। আর তাই এখনই আমাদের এই সামজিক অভিশাপ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াত হবে। শুরুতেই এই বিষয়ে ব্যপক প্রচারণা দরকার।
পাশাপাশি বিয়ের আগে পাত্র ও পাত্রীর উভয়কে বোঝার ব্যপারটাও দেখতে হবে। বিয়ে একটি পবিত্র সামজিক বন্ধন আর সেই বন্ধনই হাজার বছর ধরে আমাদের একটি সুন্দর সামজিক বন্ধন গড়ে দিয়ে যাচ্ছে। তবে সেই আকাশে আজ যে কালো মেঘ ভর করেছে সেই কালো মেঘ দূর করার দায়িত্ব আমাদেরই।
সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান যেন বিবাহ বিচ্ছেদের মতো সামজিক অভিশাপ এ ভেঙে না পড়–ক বরং পারিবার হয়ে উঠুক আরো বেশি শক্তিশালি। বন্ধনগুলো খুজে পাক নির্মল বাতাস।
লেখক : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
বিকেপি/এনএ

