বিশ্ব নারী উদ্যোক্তা দিবস : স্বপ্ন, সংগ্রাম ও সম্ভাবনার নতুন মানচিত্র
ফারজানা জিতু
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:২৭
প্রতীকী ছবি (এআই দিয়ে তৈরি)
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিটি ধাপে নারীর অবদান উল্লেখযোগ্য। ইতিহাসজুড়ে নারী কখনো সমাজের নীরব নির্মাতা, কখনো বিপ্লবের অগ্রদূত, আবার কখনো পরিবারের মেরুদণ্ড হয়ে থেকেছে। পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি নারীরা এখন উদ্যোগ ও ব্যবসার ক্ষেত্রেও শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। ফলে নিজের জীবনমান বদলানোর পাশাপাশি সমাজের ধারা, প্রজন্মের ভবিষ্যৎ, এমনকি জাতির অর্থনৈতিক মানচিত্রও রচিত হচ্ছে নতুন মাত্রায়। নারীর এই অগ্রযাত্রাকে উদযাপন করার দিনই বিশ্ব নারী উদ্যোক্তা দিবস।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নের চিত্র এখন আগের তুলনায় অনেক উজ্জ্বল। শহর থেকে গ্রাম— সর্বত্রই নারীরা নিজস্ব উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন কর্মক্ষেত্র ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছেন। কেউ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পোশাক ও হস্তশিল্প বিক্রি করছেন, কেউ প্রযুক্তিভিত্তিক স্টার্টআপ পরিচালনা করছেন, আবার কেউ স্থানীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিং করে আন্তর্জাতিক বাজারেও পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
তবে নারী উদ্যোক্তার পথ এখনো সহজ নয়। সামাজিক মানসিকতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারিবারিক চাপে পিছিয়ে পড়া, ব্যবসা পরিচালনায় অভিজ্ঞতার অভাব, ব্যাংক ঋণ কিংবা বিনিয়োগ পাওয়া— এসব কঠিন চ্যালেঞ্জ তাদের মোকাবিলা করতে হয় প্রতিনিয়ত। তবু নারীরা দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, স্বনির্ভরতার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগও তৈরি করছেন।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নারীদের উদ্যোগকে আরও গতিশীল করেছে। ফেসবুক পেজ, ই-কমার্স সাইট, অনলাইন মার্কেটপ্লেস ও কনটেন্ট মার্কেটিং— এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক নারী ঘরে বসেই ব্যবসা শুরু করতে পারছেন। লাইভ সেল, পণ্য প্রদর্শন, ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং— সবকিছু মিলিয়ে নারী উদ্যোক্তারা এখন নিজেদের ব্র্যান্ড তৈরি করার মতো সক্ষমতা অর্জন করছেন।
পরিবার ও সমাজের সহায়তা নারী উদ্যোক্তার সাফল্যের অন্যতম ভিত্তি। যেখানে পরিবার উৎসাহ দেয়, সেখানে নারীর ব্যবসা টেকসই হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। একইভাবে সামাজিক স্বীকৃতি বাড়লে আরও বহু নারী উদ্যোগ নিতে আগ্রহী হন। নারীর অর্থনৈতিক অগ্রগতি শুধু পরিবারের নয়, জাতীয় উন্নয়ন কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই বাস্তবতায় দেশীয় হস্তশিল্প ও সৃজনশীল শিল্পের বিকাশেও নারীদের অবদান বড়। এখানে আমার ‘শিল্পপুরাণ’ও সাধ্যমতো ভূমিকা রাখছে। দেশীয় ঐতিহ্য, হাতে তৈরি পণ্য এবং নারীর উদ্যোগকে কেন্দ্র করে ‘শিল্পপুরা’ণ কাজ করছে দক্ষতা উন্নয়ন, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি এবং বাজার সংযোগ তৈরির লক্ষ্যে। আমাদের বিশ্বাস— একজন নারীর উদ্যোগ সমাজের ভবিষ্যৎ ইতিবাচক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
বিশ্ব নারী উদ্যোক্তা দিবসের মূল বার্তাই হলো— নারীর ক্ষমতায়ন মানে পুরো পরিবারের, সমাজের, দেশের— এভাবে বিশ্বের অগ্রগতির ভিত্তি। তাই নারীর উদ্যোগকে উৎসাহ, প্রশিক্ষণ, বিনিয়োগ ও নিরাপদ ব্যবসায়িক পরিবেশ দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে আরও সুসংগঠিতভাবে।
বাংলাদেশের প্রতিটি নারী উদ্যোক্তার উদ্যোগ, পরিশ্রম ও সৃজনশীলতা আমাদের সম্মান ও সমর্থনের দাবি রাখে। তাদের এগিয়ে যাওয়ার গল্পই ভবিষ্যতের উন্নয়নের নতুন পথ তৈরি করবে।
ফারজানা জিতু : হস্তশিল্প উদ্যোক্তা; ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শিল্পপুরাণ
এমএইচএস

