Logo

মতামত

নেট-নির্ভর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম : সম্ভাবনার দরজা, চ্যালেঞ্জের দেয়াল

Icon

সাহানুর রহমান

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:০০

নেট-নির্ভর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম : সম্ভাবনার দরজা, চ্যালেঞ্জের দেয়াল

ইন্টারনেট হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনার ভাণ্ডার। তবে এর সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও জড়িত। নিত্য নতুন প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে সমাজে এর ভালো ও খারাপ; উভয় দিকের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কখনো আশা দেখলেও স্বপ্ন ভঙ্গের কারণ হয়ে দাড়ায় এর নেতিবাচক দিক।

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কেমন হবে তা নিয়েও কোটি মানুষের মধ্যে প্রশ্ন অজস্র। ভালো দিককে স্বীকৃতি দিয়ে, খারাপ দিক এড়িয়ে মঙ্গলার্থে প্রযুক্তিকে গ্রহণ করলে প্রজন্ম ও পৃথিবী—উভয়ই এগিয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রযুক্তির ব্যবহার ও এর উভয় দিক চিহ্নিত করতে হবে, যাতে তারা প্রযুক্তিকে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে পারে।

ইন্টারনেট এবং আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ৫জি, এআই, মেশিন লার্নিং, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম—এসবের ব্যবহার যদি দক্ষতার সঙ্গে শিখে নেওয়া যায়, তবে তা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন উভয় ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি তাদের চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলাচ্ছে, এবং মুহূর্তের মধ্যে পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে, যার ফলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও উন্মুক্ত ও বৈশ্বিক হবে।

সৃজনশীল অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, এআই সরঞ্জাম ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ তাদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা বহুগুণ বাড়াবে। এর ফলে নতুন শিল্প, ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ডিজিটাল অর্থনীতিতে ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিং এবং নতুন ডিজিটাল ব্যবসায় সহজেই যুক্ত হওয়া সম্ভব, যা কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াবে।

তবে এ সুযোগের পাশাপাশি কিছু গুরুতর সমস্যা ও চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা : মোবাইল গেম বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত আসক্তি মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা দিতে পারে। একাকীত্ব, বিষণ্ণতা, রাগপ্রবণতা এবং বাস্তব জীবনের সামাজিক সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

শারীরিক সমস্যা : দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে থাকার কারণে চোখের দৃষ্টি, মাথাব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা এবং ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

নৈতিক অবক্ষয় ও সাইবার ঝুঁকি : ক্ষতিকর বা অনৈতিক বিষয়বস্তু এবং সাইবার ক্রাইম, হ্যাকিং ও ডেটা চুরির ঝুঁকি নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় ঘটাতে পারে।

প্রযুক্তিনির্ভর শ্রমবাজারের চ্যালেঞ্জ : অটোমেশন বাড়ার ফলে শ্রম-নির্ভর কাজ কমে যাবে, এবং উচ্চ-দক্ষতাসম্পন্ন প্রযুক্তিনির্ভর কাজের জন্য দক্ষতা অর্জন করা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে।

এসকল সমস্যার সমাধানের জন্য পরিবারের, শিক্ষাব্যবস্থা, সরকারের এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

পরিবারের ভূমিকা :

১. শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা।

২. অনলাইনে তাদের কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করা।

৩. মোবাইল বা ইন্টারনেট আসক্তির নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে খোলাখুলি আলোচনা করা।

৪. বিকল্প কার্যক্রমে উৎসাহিত করা, যেমন খেলাধুলা, শিল্পকলা, পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ।

শিক্ষাব্যবস্থা ও দক্ষতা উন্নয়ন :

১. নিরাপদ ইন্টারনেট শিক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজিটাল সচেতনতা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা।

২. এআই, ডেটা, কোডিং এবং সাইবারসিকিউরিটির মতো ভবিষ্যৎ-নির্ভর প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া।

৩. প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখানো, বিনোদনের পরিবর্তে জ্ঞান অর্জন, ই-বই পড়া এবং অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ইতিবাচক দিক ব্যবহার করানো।

সরকার ও সমাজের ভূমিকা :

১. মোবাইল আসক্তি ও সাইবার ঝুঁকি বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি।

২. সাইবার ক্রাইম ও ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ।

অতএব, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নেট দুনিয়া কেমন হবে তা নির্ভর করছে আমাদের মনোভাব ও মানসিকতার ওপর। প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও নৈতিক মূল্যবোধের সঠিক ভারসাম্য স্থাপন করাই আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। তাই নেট দুনিয়াকে নিরাপদ রাখাই আমাদের প্রজন্মের জন্য প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত।

লেখক : প্রতিনিধি, বাংলাদেশের খবর, রংপুর

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

প্রযুক্তি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর