Logo

রাজনীতি

আ.লীগ পরিবারের সন্তান হলেও যে কারণে এনসিপির নেতৃস্থানে দোলা

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৫, ২১:২৮

আপডেট: ০৯ মে ২০২৫, ০৯:৫৫

আ.লীগ পরিবারের সন্তান হলেও যে কারণে এনসিপির নেতৃস্থানে দোলা

সৈয়দা নীলিমা দোলা। ছবি : বাংলাদেশের খবর

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে সৈয়দা নীলিমা দোলার নাম উঠে আসার পর থেকে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানামুখী আলোচনা। দোলা নিজে ইতোপূর্বে কোনো রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য না হলেও তার পরিবারের একাধিক সদস্যের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পর্ক রয়েছে। তার মা মাহমুদা বেগম ফরিদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মামা গোলাম নাসির আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। দোলার পরিবারের এই রাজনৈতিক পরিচয়কে সামনে এনে সম্প্রতি গণমাধ্যমে ‘ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা আলোচনা তোলে।

তবে পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে দোলা নিজের রাজনৈতিক অবস্থান গড়ে তুলেছেন, বাংলাদেশের খবরের সাথে আলাপকালে এমন দাবি করেন তিনি। তার ভাষায়—‘২০১২ সালে পরিবার ছেড়েছি, রাজপথই আমার পরিবার।’

পদপদবি বা সদস্যপদ না থাকলেও দোলা ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকেই তিনি রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। ‘নো মেট্রো অন ডিইউ’, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পবিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) বাতিলের দাবিতে সোচ্চার এবং সুফিয়া কামাল হলের ছাত্র নিপীড়নের ঘটনায় রাজপথে থাকা এই নেত্রী ঢাকার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে পরিচিত মুখ। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ১৮ জুলাই ‘আম্মাজান, এত লাশ লইয়া আমরা কই যামু’ শিরোনামে একটি নাগরিক সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন দোলা। সেই কর্মসূচির কারণে তাকে গোপনে হুমকি দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি। ওই সময় তিনি লিখেছিলেন, ‘এই সব লাশের ইনসাফ চাই।’ তার ডাকে ১৯ জুলাই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে শিল্পী-সাংস্কৃতিককর্মীরা জড়ো হন। সেখানেই নিহত হন সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়।

এছাড়া, তাহির জামান প্রিয় হত্যার পর ২০ জুলাই রাজধানীর একটি থানায় অভিযোগপত্র জমা দিতে গিয়ে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মামলার কার্যক্রম শুরু করানোর দাবি করেন দোলা। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে একজন প্রত্যক্ষদর্শী, মামলা না নিয়ে উপায় ছিল না।’

জুলাই আন্দোলনের সময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরার কাজও করেন তিনি। বলেন, ‘জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে দেশের খবর পৌঁছে দিচ্ছিলাম আমিই।’

এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, দোলার গত এক দশকের আন্দোলন-সংগ্রাম, সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী স্পষ্ট অবস্থান বিবেচনায় রেখেই তাকে কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়েছে।

সৈয়দা নীলিমা দোলা জানান, তিনি কখনোই ছাত্রলীগ কিংবা সরকারি কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। 

তিনি বলেন, ‘আমি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়ছি অনেকদিন। পরিবার নয়, আমার অবস্থান দিয়ে আমাকে বিচার করতে হবে।’

দোলার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিবেচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ থেকে মাস্টার্স করা দোলা ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নাট্যপরিচালকও।

সম্প্রতি ফরিদপুরের একাংশের ছাত্র আন্দোলনকর্মীরা তার পারিবারিক পটভূমি নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ‘এ ধরনের অভিযোগের পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থাকতে পারে’ বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির এই নেত্রী।

দোলার মতে, ‘আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে কেউ নেতা হয় না। আমি যদি দশ বছর রাজপথে লড়াই না করতাম, তবে কেউ আমাকে চিনত না।’

প্রসঙ্গত, সৈয়দা নীলিমা দোলা ২০২১ সালের ফিলিস্তিনের পক্ষে একটি কনসার্ট আয়োজন করেন এবং নিজ উদ্যোগে গাজায় সহায়তা পাঠান বলেও জানান।

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর