-68ca1745c2ac8.jpg)
সরকারকে চাপে রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) বিশেষ বার্তা দিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) থেকে মাঠের কর্মসূচিতে যাচ্ছে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা পাঁচটি দল। এছাড়া শুক্রবার সারাদেশে বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা এবং উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল করবে দলগুলো। কৌশলী দলগুলো বোঝাতে চাইছে— সরকার বড় দল বিএনপির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলে সামনে অসন্তোষ আরো বাড়বে। দলগুলোর একাধিক সূত্র বলছে- দাবি না মানা হলে প্রথম ধাপের কর্মসূচির পর মাসের শেষভাগে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাও রয়েছে। দলগুলোর নেতাদের কথায় যার প্রমাণ মিলেছে।
দলগুলোর দাবির মধ্যে রয়েছে— জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির দৃশ্যমান বিচার এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। তবে, দলভেদে দুই একটি দাবির ভিন্নতা রয়েছে।
কর্মসূচিতে যাচ্ছে এমন দলের মধ্যে রয়েছে— জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিসের অপর অংশটি।
এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি এবং গণঅধিকার পরিষদ যুগপৎ কর্মসূচিতে না থাকলেও এসব দলের প্রায় একই দাবি রয়েছে। তারাও নিজেদের মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোর নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, গত ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তারা মনে করছেন— লন্ডন বৈঠকের পর থেকে সরকার বিএনপির মতামত প্রতিষ্ঠিত করতে বিশেষভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। কমিটমেন্ট থাকলেও সংস্কার, বিচার এমনকি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না করে সরকার ভোটের দিকে এগোচ্ছে। মূলত বিএনপি দ্রুত ভোটের জন্য প্রথম থেকেই সরকারকে চাপে রেখেছে। ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফের বাড়ালেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখছেন না তারা। বিষয়টি তাদের জন্য উদ্বেগের।
দলগুলো বুঝাতে চাইছে— সরকার যেন বিএনপির কথামতো দ্রুত নির্বাচন করতে গিয়ে ইতোপূর্বে দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে সরে না আসে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যাওয়ার আগে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চান তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল হেরে যাওয়ার পর ইসলামী দলগুলো বিএনপিকে বিশেষ বার্তা দিতে চাচ্ছে। বড় দল বিএনপি যা চায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কোনো কিছু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জুলাই আন্দোলনের পক্ষের শক্তির সবার মতামততে প্রাধান্য দিতে হবে।
এছাড়া জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং পিআর পদ্ধতিতে বিএনপির অবস্থান না বদলালে যে সামনে ইসলামী দলগুলো বসে থাকবে না, সেই বার্তা দিতে কর্মসূচিতে যাচ্ছে ইসলামী ও সমমনা দলগুলো। বড় দল বিএনপি যা চাইবে তা বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না বলে সরকার ও বিএনপিকে পরিষ্কার করতে চাইছে এসব দল।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘দেশের বেশির ভাগ মানুষ আমাদের দাবির পক্ষে, তাই আমরা সেখান থেকে সরে আসতে পারি না। আমরা কাউকে চাপ দিতে চাই না।’
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ চাপ নেয় সেটি তাদের ব্যাপার। তবে, কোনো বড় দল যদি মনে করে, সরকার শুধুমাত্র তাদের কথায় সব কিছু বাস্তবায়ন করবে সেটি আমরা মানতে পারি না। সরকার দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা মাঠের কর্মসূচিতে থাকবো। কারণ, কমিশনের মেয়াদ শেষ হলেও সংস্কারের দৃশ্যমান অগ্রগতি আমরা দেখছি না।’
এদিকে, গত রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছাতেই হবে বলে বক্তব্য দেন। তারপরও বৈঠক থেকে বের হয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ নেতারা প্রত্যেকে তাদের আগের অবস্থানেই বক্তব্য দেন।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘মানুষের দাবি নিয়ে আমরা কর্মসূচিতে যাচ্ছি। সামনের দিকে বৃহৎ পরিসরে মানুষের কাছেই যাওয়া আমাদের লক্ষ্য।’
এদিকে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে তিন ইসলামী দল একই দিনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দলগুলো হচ্ছে— জামায়াত ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিস। তার একদিন আগে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দেশব্যাপী তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির আমির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
জানা গেছে, সোমবার দুপুরে প্রথমে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের পাঁচ দফা দাবিতে দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো কোন দলের কথায় প্রভাবিত হয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। তাই জনগণের দাবি আদায়ের জন্য গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
জামায়াতের সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার আধাঘন্টা পর নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির দাবির সঙ্গে হুবহু মিল রেখে একই কর্মসূচির ঘোষণা দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। এ সময় সরকার পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ঘোষণা না দিলে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে কঠোর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এদিকে, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের কর্মসূচির পরপরই পর খেলাফত মজলিস একই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। পুরানা পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানের সুস্পষ্ট উদ্যোগ না নিলে পরবর্তী সময় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিকেপি/এমএইচএস