গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী দল গঠনের পর জনমত ধরে রাখতে না পারা এবং রাজনৈতিক পরিপক্বতার পরিচয় দিতে ব্যর্থতায় নির্বাচনী জোট গঠন ইস্যুতে বড় দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কাছে গুরুত্ব কমেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। দল দুটি একসময় জোট গঠনে আগ্রহ দেখালেও এনসিপিকে নিয়ে তারা এখন বেশ কৌশলী। নিজেদের জায়গা থেকে এনসিপিকে জোটে পেতে তৎপরতা দেখাবে না বিএনপি ও জামায়াত। দল দুটির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে, এনসিপির শীর্ষ নেতারা ভিন্ন কথা বলছেন। তাদের দাবি, বড় দল বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে গিয়ে জোট গঠন বা স্বতন্ত্রভাবে পথ চলতে চাইছেন তারা। নেতাদের মতামতকে প্রধান্য দিতেই ‘আপাতত’ বড় দুই দলের সঙ্গে জোট হচ্ছে না।
সবশেষ এনসিপি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)-এর সঙ্গে গত ২৭ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে জোট গঠনের ঘোষণা দিলেও শেষ মুহূর্তে তা পণ্ড হয়ে যায়।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দলের নির্বাহী কমিটির ৯৫ ভাগ নেতা বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে জোট করার বিপক্ষে। বিএনপির নানা অপকর্ম আর জামায়াতের ঐতিহাসিক বিতর্কের দায় নিতে চান না তারা। বিএনপি ও জামায়াতে এনসিপির গুরুত্ব কমেছে কিনা সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমরাই আপাতত তাদের সঙ্গে জোট করতে চাইছি না।
বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান, এনসিপিকে কাছে পেতে তারা এখন খুব একটা তৎপর নন। কারণ, গণঅভ্যুত্থানের পরপরই ছাত্রদের প্রতি জনসাধারণের এক ধরনের আগ্রহ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তার বিপরীত হয়েছে। এ ছাড়া দল গঠনের পর এনসিপি সাংগঠনিকভাবে খুব একটা জনসমর্থন পায়নি। তাই দলটিকে জোটে নিতে খুব একটা আগ্রহী নয় বিএনপি। বরং বিএনপি জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দুইজন ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখছে। তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, বিএনপির সঙ্গে থাকলে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। দলটি তাদের দুজনকে মনোনয়ন দিচ্ছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ভোট করবেন বলেও আলোচনা চলছে।
কিছুদিন আগে ল²ীপুরের রামগঞ্জের ইছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মাহফুজের পিতা আজিজুর রহমান।
এ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারকে টার্গেট করে কাছে নেওয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। সম্প্রতি জুলাইয়ে শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই মীর স্নিগ্ধ বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। এনসিপিকে গুরুত্বহীন করতেই দলটির এমন কৌশল বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, জামায়াতেরও এনসিপিকে নিয়ে রয়েছে ভিন্ন চিন্তা। দলটি এনসিপির বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করলেও নির্বাচনী জোট করার বিষয়ে খুব আগ্রহ দেখাবে না।
দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোট করলেও হয়তো শেষ সময়ে এনসিপি বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের আসনে ছাড় দেওয়ার তৎপরতা চালাতে পারে। তখন জামায়াত জুলাই আন্দোলনের স্পিরিটকে মূল্যায়নের কথা বলে বিষয়টিতে ইতিবাচক সাড়া দেবে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিশেষ করে জুলাই চেতনা ধারণকারী কারও জন্য দরজা বন্ধ করেনি জামায়াত। এনসিপি আসতে চাইলে আমরা না করছি না। এনসিপিকে জোটে আনতে কোনো তৎপরতা আছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি একান্ত তাদের (এনসিপি) বিষয়।
বিএনপি-জামায়াতের এমন মনোভাবের পর বড় দলের সঙ্গে জোট গঠন প্রশ্নে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে এনসিপি। তারা বিএনপি ও জামায়াত দুই দলের সমালোচনা করে চাপে রাখতে চায়। বোঝাতে চায় এনসিপি নিজস্ব অবস্থানে রয়েছে।
নির্বাচনী জোট না করলেও জুলাই আন্দোলনে নিজেদের ত্যাগের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসে ‘বিশেষ মাধ্যমে’ তফসিলের আগেভাগে শীর্ষ পাঁচ থেকে ছয় নেতার আসনে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থন নিতে চায় দলটি। তাই, এখনো দলটির শীর্ষ নেতারা দুই দলের সমালোচনা করলেও উভয় দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সম্প্রতি দলটির বড় একটি অংশ জামায়াত জোটে যোগ দেওয়ার পক্ষে ভূমিকা রাখছেন বলে জানা গেছে।
এনসিপির যুগ্ম-সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, অনেকে এনসিপির নির্বাচনী জোট করা নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। আমরা তিন দল বা সংগঠন নিয়ে একটি জোট গঠনের কথা ভাবছি। শিগগিরই তিন দলের নতুন জোট ঘোষণা করা হবে। আর বিএনপি-জামায়াতের কাছে এনসিপির আগ্রহ কমেছে বলেও একটি গ্রুপ অপপ্রচারে নেমেছে। এসবের কোনো ভিত্তি নেই।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এনসিপির আত্মপ্রকাশ হয়। দলটির বেশির ভাগ শীর্ষ নেতা গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারির যোদ্ধা। ভিন্ন ধারার রাজনীতি আর নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রæতি ছিল এনসিপির।
কিন্তু শুরু থেকেই দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা চাঁদাবাজি ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন। তাই তরুণদের নেতৃত্বাধীন দলটি নিয়ে মানুষের মাঝে যে এক ধরনের ইতিবাচক প্রত্যাশা ছিল সেটি অনেকেটাই হতাশায় পরিণত হয়েছে।
বিকেপি/এমএইচএস

