দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে বিএনপির স্বাভাবিক কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকা দলটির নেতাকর্মীদের দৃষ্টি এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। কোনোভাবেই দলটির নেতাকর্মীরা স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরতে পারছেন না।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন- তাদের কাছে অন্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে দলীয় প্রধানের সুস্থতার ইস্যুই অগ্রাধিকার। কারণ, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার ‘আপসহীন ও সংগ্রামী’ ভূমিকায় বিএনপি এখন গণমানুষের দল। দীর্ঘদিন অসুস্থতায় রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও তিনি দেশের গণতন্ত্র ও দলে ঐক্যের প্রতীক।
এক সপ্তাহ আগেও বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল একেবারে স্বাভাবিক। গত ৩ নভেম্বর দলটির প্রাথমিকভাবে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় সারা দেশে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছিল। এ ছাড়া দলটির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা দলগুলোর নেতাদের নিয়ে আসন সমঝোতায় দলটির নেতারা নানাভাবে বৈঠকও করছিলেন। মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হওয়া নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করা হচ্ছিল। এককথায় দলটি নির্বাচনী ট্রেনে উঠেছিল।
কিন্তু গত ২৩ নভেম্বর খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রথমে নেতাকর্মীরা মনে করছিলেন, দীর্ঘদিন অসুস্থ চেয়ারপারসন দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন। কারণ, ইতোপূর্বে তিনি অনেকবার হাসপাতালে ভর্তি হলেও সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু এবার ভর্তির দুইদিন পর থেকে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। গত তিন দিন থেকে ৮০ বছর বয়সি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল’ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও বিএনপি নেতারা।
উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নেওয়ার কথা থাকলেও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নেওয়া সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকদের পাশাপাশি বড় পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান দেশে এসে শাশুড়ির চিকিৎসা তদারকি করছেন। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দলের চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ থাকায় গত ৩০ নভেম্বর বিএনপি ঘোষিত ‘মশাল রোড শো’ স্থগিত করা হয়েছে। বিজয়ের মাস উপলক্ষে দলটির এ কর্মসূচি ছিল।
‘ধানের শীষ’ প্রতীকে প্রচার-প্রচারণা স্থগিত রেখে অনেক আসনে দলীয় প্রধান অসুস্থতায় বেশির ভাগ আসনে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে। গত কিছুদিন দেশের বেশির ভাগ জেলায় খালেদা জিয়ার সুস্থতায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দলটির নেতাকর্মীদের দৃষ্টি এখন হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়ার দিকে। অনেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এসে ভিড় করছেন।
এ ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশে আসতে পারবেন কিনা তা নিয়েও দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে নানা দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন- ‘খালেদা জিয়ার প্রতি নেতাকর্মী বা দেশের মানুষের ভিন্নরকম আবেগ ও ভালোবাসা রয়েছে। কারণ, তিনি নিজের সুখ বা শান্তির কথা চিন্তা না করে আজীবন দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। বারবার কারাবরণ করলেও দেশ ও দলকে বিপদে ফেলে বিদেশে যাননি। সুতরাং নেতাকর্মীরা অন্য সবকিছুর চেয়ে তা সুস্থতাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। তারপরও ধীরে ধীরে দলের কার্যক্রম স্বাভাবিক হচ্ছে।’
এদিকে, খালেদা জিয়া অসুস্থ হওয়ায় বিএনপি কিছুটা থমকে গেলেও জামায়াতে ইসলামী ও আট দল রাজনীতির মাঠে বেশ সক্রিয়। দলগুলো এখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হ্যাঁ-এর পক্ষে প্রচারণাসহ পাঁচ দফা দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচিতে ছিল। বিভাগীয় সমাবেশ শেষ হয়েছে গত ৬ ডিসেম্বর।
দলগুলো বিভাগীয় সমাবেশ থেকে তাদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। এসব সমাবেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিএনপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দলখবাজির অভিযোগ এনে দলটিকে বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া তফসিলের খুব নিকটবর্তী সময়ে আট দল যৌথভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশে জোরেশোরে কাজ করছে। সব মিলিয়ে এ জোটটি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডে রয়েছে।
আট দলে যুক্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, ‘খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক। আমরা আট দল তার জন্যে সর্বোচ্চভাবে দোয়া কামনা করছি। এখন যে কর্মসূচি আট দল পালন করছে সেটি পূর্বঘোষিত। এখন কর্মসূচি পালন নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।’
বিকেপি/এমবি

