Logo

রাজনীতি

জামায়াতের কৌশলগত রূপান্তর : আত্মঘাতী নাকি ঐতিহাসিক বাস্তবতা?

Icon

খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৮

জামায়াতের কৌশলগত রূপান্তর : আত্মঘাতী নাকি ঐতিহাসিক বাস্তবতা?

বসে বসে কোনো কাজ নেই। যেমন প্রবাদ আছে—‘নেই কাজ, তো খই ভাজ!’ তাই ভাবলাম কিছু খাজুনে আলাপই করি।

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে একটি ইসলামি রাজনৈতিক দল। বহু বছর ধরে তারা ইসলামভিত্তিক শাসনব্যবস্থা ও নৈতিক নেতৃত্বের কথা বলে আসছে—যার প্রতিফলন দেখা যায় তাদের পুরোনো মেনিফেস্টোতে: ‘আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই।’

তবে স্বাধীনতার সময়কার কিছু সিদ্ধান্ত দলটিকে অনেকটা পিছিয়ে দেয়। চারদলীয়জোট, ক্ষমতার অংশিদার হওয়ার পরও আওয়ামী লীগ–নেতৃত্বাধীন দীর্ঘমেয়াদি সরকারের কঠোর দমননীতি, রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, এবং বহু শীর্ষ নেতার হারিয়ে যাওয়া—এসব কারণে জামায়াত দীর্ঘ সময় ধরে মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেনি। তা–সত্ত্বেও সংগঠনটি টিকে ছিল, এবং ২০২৪ সালের আগস্টের পর বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় তারা পুনরায় সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পায়।

এরপর মাত্র এক বছরের মধ্যেই দলটির ভেতরে ও বাইরে বেশ কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

লোগো পরিবর্তন, ভাইরাল বক্তা ও সাংবাদিককে মনোনয়ন, হিন্দুসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রার্থী নির্বাচন, পূজা-পার্বনে অংশগ্রহণ; এসব নিয়ে দলটি ব্যাপক আলোচনায় আসে। মনে হচ্ছে, তারা বর্তমান যুগের রাজনৈতিক বাস্তবতার সাথে নিজেদের খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। উদ্দেশ্য—একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের রূপরেখা দাঁড় করানো।

এখানে প্রশ্ন আসে, ইসলামে এই ধরনের কৌশলগত রূপান্তরের নির্দেশনা কী?

ইতিহাসে হুদাইবিয়ার সন্ধি কিংবা মদিনা সনদের মতো উদাহরণগুলোতে দেখা যায়—ইসলামের রাষ্ট্রব্যবস্থায় বাস্তবতা বিবেচনায় কৌশলগত নমনীয়তা ছিল। প্রয়োজন হলে সমঝোতা, সহযোগিতা এবং সামাজিক বহুত্ববাদও গ্রহণ করা হয়েছিল। তাহলে জামায়াতের এই পরিবর্তনকে কি সেই ধারাবাহিকতার সাথে তুলনা করা যায়?

অথবা, তারা কি আওয়ামী লীগের দেখানো পথে হাঁটছে—যে পথে জনপ্রিয়তা ও ভাইরাল মুখকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন দেওয়া হয়, যেখানে অনেকেই প্রকৃত অর্থে রাজনীতিবিদ ছিলেন না? আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামনে রেখে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও শেষপর্যন্ত ফ্যাসিবাদী প্রবণতার কারণে বড় ধাক্কা খায়।

সুতরাং প্রশ্ন থেকেই যায়— জামায়াতে ইসলামী কি একই পথে হাঁটতে যাচ্ছে? তারা কি অরাজনৈতিক জনপ্রিয় ব্যক্তিদের সংসদে নিয়ে ইসলামি চেতনা পুঁজি করে রাজনীতিতে টিকে থাকতে চাইবে? নাকি এটি সময়ের দাবি মেনে গৃহীত একটি কৌশলগত ও বাস্তবসম্মত রূপান্তর?

এ প্রশ্নগুলোর উত্তর ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আচরণই নির্ধারণ করবে।

আইএইচ/

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর