জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাচ্ছে এনসিপি, ঘোষণা আগামীকাল
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:০৯
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে এই জোটের ঘোষণা দেওয়া হবে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ফাইনালি জামায়াতের সঙ্গে এনসিপি জোটে যাচ্ছে। আগামীকাল এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে।
এদিকে জামায়াতের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্তের মধ্যেই দলটি থেকে পদত্যাগ করেছেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে ডা. তাসনিম জারা জানান, তিনি কোনো নির্দিষ্ট দল বা জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-৯ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদাবাসীর উদ্দেশে লেখেন, তার স্বপ্ন ছিল একটি রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম থেকে সংসদে গিয়ে এলাকার মানুষের ও দেশের সেবা করা। তবে বাস্তবিক প্রেক্ষাপটের কারণে তিনি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।
পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, একটি দলের প্রার্থী হলে স্থানীয় অফিস, সুসংগঠিত কর্মীবাহিনী এবং সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার সুযোগ থাকে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় এসব সুবিধা তার থাকবে না।
আইনি বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে ডা. তাসনিম জারা জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে ঢাকা-৯ আসনের চার হাজার ৬৯৩ জন ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হবে। রোববার থেকেই এই স্বাক্ষর সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করবেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, দলের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পদত্যাগপত্র পাঠানোর পরপরই ডা. তাসনিম জারা ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করেননি।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে এনসিপি থেকে আরও কয়েকজন নেতা পদত্যাগ করেছেন। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন সমঝোতা ও রাজনৈতিক জোটের আলোচনা শুরুর পর দলটির ভেতরে ভিন্নমত স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
‘দল ও বড় অংশের নেতারা ভুল পথে আছে’ মন্তব্য করে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক। এর আগে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা অনিক রায়, তুহিন খান ও অলিক মৃ-সহ আরও কয়েকজন নেতা পদত্যাগ করেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ আটদলীয় জোটের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট বা আসন সমঝোতার সম্ভাবনা নিয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্তত ৩০ জন নেতা আপত্তি জানিয়েছেন। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে লেখা এক চিঠিতে তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন চিঠির বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে নেতারা উল্লেখ করেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের বিভাজনমূলক কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন দলে গুপ্তচরবৃত্তি, এনসিপির ওপর দায় চাপানো, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অপপ্রচার, নারী সদস্যদের চরিত্রহনন এবং ধর্মকে কেন্দ্র করে সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থান দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।
নেতাদের অভিযোগ, জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ইতিহাস বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা, গণহত্যায় সহযোগিতা ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়টি বাংলাদেশি গণতান্ত্রিক চেতনা এবং এনসিপির মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী একাধিকবার ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রায় দেড় হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রি করে ১২৫ জন প্রার্থী ঘোষণার পর অল্প কিছু আসনের জন্য কোনো জোটে যাওয়া জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, জোটের সম্ভাবনার খবর প্রকাশের পর থেকেই দলের প্রতি সমর্থন দেওয়া কর্মী-সংগঠক ও সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ সমর্থন প্রত্যাহারের মনোভাব দেখাচ্ছেন। এতে এনসিপির মধ্যপন্থী ও নতুন রাজনীতিতে বিশ্বাসী সমর্থকভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়, নীতিগত অবস্থান অক্ষুণ্ণ রেখে কৌশল নির্ধারণ করা উচিত। কৌশলগত কারণে নীতিগত অবস্থান বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেন যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন, এস এম সাইফ মোস্তাফিজ, ফরিদুল হক, মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, ইমন সৈয়দসহ কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের একাধিক নেতা।
এমএইচএস

