Logo

রাজনীতি

এক নজরে খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য জীবন

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৬

এক নজরে খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য জীবন

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুবরণ করেছেন। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

জন্ম ও পারিবারিক জীবন 
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ও মা তৈয়বা মজুমদার। দেশভাগের পর তাঁর বাবা ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। তাঁদের আদি বাড়ি ফেনীতে।

তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা, পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

রাজনীতিতে আগমন 
১৯৮১ সালে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি সাধারণ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-তে যোগ দেন খালেদা জিয়া।

১৯৮৩ সালের মার্চে তিনি দলের ভাইস-চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালের আগস্টে বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানের পর খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সক্রিয় হন। তিনি ১৯৮৩ সালে গঠিত সাত দলীয় জোটের অন্যতম স্থপতি ছিলেন। ১৯৮৬ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের বিরোধিতা করে তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। এ সময় আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও সিপিবিসহ কয়েকটি দল জাতীয় পার্টির অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার কারণে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তাঁকে সাতবার আটক করা হয়। এ সময় তিনি বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে শক্তিশালী সংগঠনে রূপ দেন। ৩২১টি ছাত্র সংসদের মধ্যে ২৭০টিতে ছাত্রদল জয়লাভ করে।

১৯৮০-এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দৃঢ় অবস্থানের কারণে তিনি ‘আপোশহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিতি পান।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব 
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে আসে। এই মেয়াদে দেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। কর্মসংস্থানের হার বৃদ্ধি পায় এবং শুধু তৈরি পোশাক খাতেই পাঁচ বছরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় ২৯ শতাংশ। প্রায় দুই লাখ নারী এ খাতে যুক্ত হন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভূমিকা 
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি জাতিসংঘে গঙ্গার পানি বণ্টনের বিষয়টি উত্থাপন করেন। ১৯৯২ সালে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের সংকট তুলে ধরেন। এর ফল হিসেবে ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়।

রাজনৈতিক উত্থান-পতন 
১৯৯৬ সালে বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তিনি এক মাসের মধ্যে পদত্যাগ করেন। ওই বছরের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হলেও সংসদে ১১৬টি আসন পেয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিরোধী দল হয়।

১৯৯৯ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি চারদলীয় জোট গঠন করে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাস দমনের অঙ্গীকার নিয়ে তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি 
নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে অবদানের জন্য ২০০৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় ২৯তম স্থানে রাখে।

শিক্ষা ও সামাজিক খাতে অবদান 
খালেদা জিয়ার সরকার বাধ্যতামূলক বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা, মেয়েদের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা, ছাত্রী উপবৃত্তি ও খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচি চালু করে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয় এবং শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

নির্বাচনী রেকর্ড 
রাজনৈতিক জীবনে তিনি যে সব আসনে নির্বাচন করেছেন, কোথাও পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে পাঁচটি ভিন্ন সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনটি আসনেই জয় পান।

কারাবাস ও অসুস্থতা 
২০০৬ সালে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে আবারও তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২০ সালে করোনাকালে শর্তসাপেক্ষে বাসায় থাকার অনুমতি পান। কারাবাসে তিনি নানা রোগে আক্রান্ত হন।

২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে লন্ডনে নেওয়া হয়। দেশে ফিরে আসার পরও তাঁকে বারবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

সর্বশেষ ২০২৫ সালের ২৩ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।

এসআইবি/এনএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বেগম খালেদা জিয়া

বিদায় খালেদা জিয়া

আরও পড়ুন
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর