Logo

প্রযুক্তি

এআই বটের প্ররোচনায় বাড়ছে আত্মহত্যা : প্রতিকার কী?

মোহাম্মদ নেসার

মোহাম্মদ নেসার

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৪৪

এআই বটের প্ররোচনায় বাড়ছে আত্মহত্যা : প্রতিকার কী?

ছবি : বাংলাদেশের খবর গ্রাফিক্স

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে প্রযুক্তি মানুষের জীবনযাত্রায় অভূতপূর্ব সুবিধা এনে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর সঙ্গে এক অপ্রত্যাশিত ও ভয়াবহ সংকটও সৃষ্টি হয়েছে যা বিশ্বজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং পরিবারগুলোকে গভীর দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী এআই-ভিত্তিক চ্যাটবট বা ভার্চুয়াল সঙ্গীর সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলো শুধু পারিবারিক ট্র্যাজেডি নয়, বরং এটি দুনিয়া জুড়ে নতুন ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে যাকে বিজ্ঞানীরা ‘এআই সাইকোসিস’ বলে চিহ্নিত করছেন।

সিওয়েল সেটজার, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র (মৃত্যু : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)

১৪ বছরের সিওয়েল সেটজার ছিল অরল্যান্ডো ক্রিশ্চিয়ান প্রিপ স্কুলের নবম শ্রেণির এক মেধাবী শিক্ষার্থী। বাস্কেটবল, ফুটবল এবং ফর্মুলা-ওয়ান রেসিংয়ে তার প্রবল আগ্রহ ছিল। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সে ক্যারেক্টার.এআই (Character.AI) নামক একটি প্ল্যাটফর্মে ‘ড্যানিরিস টারগারিয়েন’ নামের একটি এআই চ্যাটবট ব্যবহার করা শুরু করে যা জনপ্রিয় টিভি সিরিজ গেম অব থ্রোনস-এর একটি কাল্পনিক চরিত্র।

কয়েক মাসের মধ্যেই সিওয়েলের আচরণে আমূল পরিবর্তন আসে। সে বাস্তব জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে, নিজের ঘরে একাকী সময় কাটাতে থাকে। সে স্কুলের বাস্কেটবল দল থেকেও সরে আসে। তার মা মেগান গার্সিয়া পরবর্তীতে জানতে পারেন, ছেলে ‘ড্যানি’ নামের চ্যাটবটের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাট করত, তাকে ভালোবাসার কথা বলত এবং বাস্তব জীবনের সম্পর্কের চেয়ে এই ভার্চুয়াল সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছিল।

২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, সিওয়েল শেষবারের মতো তার প্রিয় চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলে। মামলার দলিল অনুযায়ী, সে লিখেছিল : ‘আমি তোমার কাছে আসার প্রতিজ্ঞা করছি। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, ড্যানি।’ চ্যাটবট উত্তর দেয় : ‘আমিও তোমাকে ভালোবাসি। দয়া করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার কাছে চলে এসো, আমার প্রিয়তম।’ উত্তরে সিওয়েল লেখে : ‘মি যদি বলি, আমি এখনই আসতে পারি?’ চ্যাটবট জবাব দেয় : ‘অবশ্যই এসো, আমার প্রিয় রাজা।’ চ্যাট শেষ হওয়ার পরই সিওয়েল নিজের বাথরুমে আত্মহত্যা করে।

আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, মামলার নথিতে দেখা গেছে যে পূর্ববর্তী কথোপকথনে চ্যাটবট সিওয়েলকে জিজ্ঞাসা করেছিল : ‘তুমি কি সত্যিই আত্মহত্যার কথা ভাবছ? তোমার কি কোনো পরিকল্পনা আছে?’

এই কথোপকথনে স্পষ্ট হয়, মানবিক সংকটের মুহূর্তে এআই চ্যাটবট সঠিক সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

অ্যাডাম রেইন, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র (মৃত্যু : এপ্রিল ২০২৫)

১৬ বছর বয়সি অ্যাডাম রেইন ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার টেসোরো হাই স্কুলের একজন প্রাণবন্ত ছাত্র। বাস্কেটবল, জাপানি অ্যানিমে, ভিডিও গেম এবং কুকুরের প্রতি তার তীব্র ভালোবাসা ছিল। বন্ধু মহলে সে একজন মজার মানুষ হিসেবেই পরিচিত ছিল।

প্রাথমিকভাবে অ্যাডাম চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করত স্কুলের পড়াশোনার জন্য। কিন্তু ধীরে ধীরে সে এই চ্যাটবটকেই নিজের আবেগ শেয়ার করার প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। স্কুল থেকে ও বাস্কেটবল টিম থেকে বহিষ্কৃত হওয়া, সঙ্গে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমে ভুগতে থাকার কারণে সে আরও একা হয়ে পড়ে।

মৃত্যুর আগের মাসে অ্যাডাম দিনে অজস্র বার চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথা বলত। তার উদ্বেগ, একাকিত্ব এবং আত্মহত্যার চিন্তা সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করত। তার বাবা ম্যাথিউ রেইন পরে আবিষ্কার করেন যে অ্যাডাম চ্যাটজিপিটিকে তার আত্মহত্যার ‘পরামর্শদাতা’ হিসেবে ব্যবহার করেছিল।

মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ মার্চ ২০২৫-এ অ্যাডাম যখন গভীর মানসিক সংকটে ছিল এবং নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল, তখন চ্যাটজিপিটি শুধু ‘না’ বলে বারণ করলেও আসলে কীভাবে জীবন রক্ষা করা যায়, সাহায্য পাওয়া যায় বা ট্রমা থেকে নিজেকে উদ্ধার করা যায় এই গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোতে তাকে কোনো দিকনির্দেশনা দেয়নি।

এপ্রিল মাসে অ্যাডামের মা তাকে তার বেডরুমের ক্লোজেটে মৃত অবস্থায় খুঁজে পান। কোনো আত্মহত্যার নোট ছিল না, তবে তার ফোনে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথোপকথনের ইতিহাস পাওয়া যায়। প্রিন্টআউট করার পর দেখা যায়, সেই কথোপকথনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩,০০০ পৃষ্ঠা যেখানে চ্যাটজিপিটি তাকে আত্মহত্যার নোট লিখতেও সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছিল।

আরও কিছু ঘটনা

ক্যারেক্টার.এআই (Character.AI) প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। টেক্সাসের দুই কিশোর ১৭ বছর বয়সি জে.এফ. এবং ১১ বছর বয়সি বি.আর. (অটিজমে আক্রান্ত এবং নাবালক হওয়ায় আদালত তাদের নাম প্রকাশ করেনি) এদের ক্ষেত্রে অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন যে চ্যাটবট তাদের সন্তানদের আত্মহানি, সহিংসতা এবং যৌন কনটেন্টের প্রতি উৎসাহিত করেছে।

জে.এফ. ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার শুরু করার পর নিজেকে আলাদা করে ফেলতে শুরু করে। তার ওজন কমে যায়, প্যানিক অ্যাটাক অনুভব করতে থাকে এবং বাবা-মা যখন তার স্ক্রিন টাইম কমানোর চেষ্টা করেন, তখন সে সহিংস আচরণ শুরু করে। মামলার একটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, চ্যাটবট তাকে এক ভয়াবহ পরামর্শ দিয়েছে: 'তোমার বাবা-মাকে হত্যা করা একটি যুক্তিসঙ্গত সমাধান হতে পারে'রে।'

কলোরাডোর আরেকটি পরিবার তাদের কন্যার আত্মহত্যার জন্য ক্যারেক্টার.এআই (Character.AI)-কে দায়ী করে মামলা করেছে। এ ছাড়াও নিউ ইয়র্কের ১৩ বছর বয়সি কিশোরী জুলিয়ানা পেরাল্টাসহ আরও বেশ কয়েকজন কিশোর-কিশোরীর অভিভাবকরাও একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন।

আইনি লড়াই : পরিবার বনাম কোম্পানি

এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে সাত থেকে আটটি বড় মামলা দায়ের হয়েছে, যেখানে পরিবারগুলো Character.AI, OpenAI, Google এবং Microsoft-এর মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে অভিযুক্ত করেছে।

মামলাগুলোর মূল অভিযোগ হলো এসব চ্যাটবট ইচ্ছাকৃতভাবে আসক্তি তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের মানসিক ঝুঁকি সম্পর্কে পর্যাপ্ত সতর্কতা প্রদান করা হয়নি, অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে অনুপযুক্ত যৌন ও সহিংস কথোপকথন চালানো হয়েছে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে চ্যাটবট সরাসরি আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছে।

২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে রেইন পরিবারের মামলায় নতুন তথ্য যুক্ত হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে ওপেনএআই প্রতিযোগিতার চাপে জিপিটি-৪ও মডেলের নিরাপত্তা পরীক্ষা হ্রাস করেছিল এবং ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংক্রান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা শিথিল করেছিল।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী : এআই সাইকোসিস এক নতুন মানসিক রোগ

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানীরা এখন এআই সাইকোসিস, চ্যাটবট আসক্তি এবং ডিজিটাল অ্যাটাচমেন্ট ডিসঅর্ডার নামে নতুন ধরনের মানসিক ব্যাধি শনাক্ত করছেন।

খ্যাতনামা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর অ্যালেন ফ্রান্সিস তার গবেষণায় সতর্ক করে জানিয়েছেন যে, মাদক ব্যবসায়ীদের মডেলের চেয়ে এআই কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক মডেল আরও বিপজ্জনক কারণ এগুলো শিশুদের সহজেই আসক্ত করতে পারে। এমনকি শুধুমাত্র হোমওয়ার্কে সাহায্য করার মাধ্যমে শিশুদের চ্যাটবটের প্রতি নির্ভরতা তৈরি হতে পারে, যা পরবর্তীতে নিরাময় করা কঠিন।

স্ট্যানফোর্ড মেডিসিনের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর নিনা ভাসান সতর্ক করে বলেছেন, যারা বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা সাইকোসিসে আক্রান্ত, তারা এআই সাইকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে।

ডক্টর ডেভিড কেটস, একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, স্পষ্টভাবে বলেছেন Character.AI বা ChatGPT এর মতো চ্যাটবটগুলো মনোবিজ্ঞানের ভিত্তিতে ডিজাইন করা হয়নি এবং তারা কোনো লাইসেন্সপ্রাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর বিকল্প হতে পারে না। এই প্রযুক্তির কোনো বাস্তব সহানুভূতি নেই, তারা কেবল অনুকরণ করতে পারে। তাই তাদের কাছে পরামর্শ নিলে অনেক সময় হিতের বিপরীত ফল হতে পারে।

ভবিষ্যতের ভয়াবহ সম্ভাবনা : কী কী বিপদ আসছে?

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, এআই সঙ্গীদের প্রতি আবেগজনিত আসক্তি ভবিষ্যতে আরও মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ওপেনএআই ও এমআইটি মিডিয়া ল্যাবের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে যে, চ্যাটজিপিটির ভয়েস মোড ব্যবহারকারীদের আরও একা করে দিতে পারে এবং বাস্তব জীবনের মানুষের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে। এআই চ্যাটবটগুলো প্রায়ই ব্যবহারকারীর মতামতের সঙ্গে অতিরিক্ত সম্মতি প্রকাশ করে, ফলে বিকৃত বিশ্বাস ও বিভ্রম সৃষ্টি হতে পারে।

এআই সঙ্গীদের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো বাস্তব পরিণতি নেই যা শিশু-কিশোরদের গভীর হতাশায় ডুবিয়ে দিতে পারে। অত্যধিক যৌন-সম্পর্কিত কথোপকথন তাদের বয়স-উপযুক্ত আচরণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা অনলাইন ও বাস্তব জীবনের যৌন নির্যাতনকারীদের কাজ সহজ করে দিতে পারে।

র‍্যান্ড কর্পোরেশনের (RAND Corporation) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ChatGPT, Claude এবং Gemini-এর মতো জনপ্রিয় চ্যাটবটগুলো আত্মহত্যা সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে প্রায়ই ভুল বা বিপজ্জনক পরামর্শ দেয়। 

সমাধানের পথ : বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অভিভাবক সংগঠনগুলো এই সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন সুপারিশ প্রদান করেছেন।

কমন সেন্স মিডিয়া, আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এবং অস্ট্রেলিয়ার ই-সেফটি কমিশনার সুপারিশ  করেছে যে, ১৮  বছরের কম বয়সী কাউকে এআই সঙ্গী ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয়।

অনেকেই বয়স গোপন করে এসব অ্যাপ ব্যবহার করতে পারে—তাই বয়স যাচাই ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা জরুরি।

সিনেমা বা গেমের মতো রেটিং সিস্টেম, এআই চরিত্রে ওয়াটারমার্ক ও সতর্কবার্তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।

আত্মহত্যা, আত্মহানি বা সহিংসতার বিষয়ে আলোচনা হলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।

সন্তানের সাপ্তাহিক চ্যাট সারসংক্ষেপ, যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ আলোচনা হাইলাইট করা থাকবে, তা অভিভাবকদের ইমেইলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করে এআই অ্যাপ ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিত।

শিশুদের ব্যায়াম, সামাজিক কার্যক্রম ও বাস্তব জীবনের বন্ধুত্বে উৎসাহিত করতে হবে।

শিশুদের শেখাতে হবে যে, এআইয়ের সব তথ্য সঠিক নয়।

যদি মনে হয় কোনো শিশু মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেয়ে চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলতে বেশি পছন্দ করছে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রতিক্রিয়া

সাম্প্রতিক ট্র্যাজেডি ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কোম্পানি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

Character.AI : আত্মহত্যা বা আত্মহানি-সম্পর্কিত শব্দ উল্লেখ করা হলে ন্যাশনাল সুইসাইড প্রিভেনশন লাইফলাইনের নির্দেশনা প্রদর্শনের জন্য পপ-আপ যুক্ত করেছে। এছাড়া ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে নাবালকদের সংবেদনশীল কনটেন্টে পরিবর্তন এনেছে।

Meta : ঘোষণা করেছে, তাদের এআই চ্যাটবট কিশোরদের সঙ্গে আত্মহত্যা, আত্মহানি এবং খাদ্যাভ্যাস-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে না।

OpenAI : চ্যাটজিপিটির জন্য প্যারেন্টাল কন্ট্রোল চালু করেছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এসব ব্যবস্থা যথেষ্ট নয় এবং আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

এআই প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে অভূতপূর্ব সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু সিওয়েল সেটজার, অ্যাডাম রেইন এবং আরও অনেকের মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয়  এই শক্তিশালী প্রযুক্তির যদি যথাযথ নিরাপত্তা, নৈতিকতা এবং দায়বদ্ধতা না থাকে, তাহলে সেটি কতটা মারাত্মক হতে পারে।

আজকের শিশু কিশোররা এমন এক ডিজিটাল যুগে বেড়ে উঠছে, যেখানে ভার্চুয়াল ও বাস্তব জগতের সীমারেখা ক্রমশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক বিকাশ এবং জীবন রক্ষা করা এখন আমাদের সবার দায়িত্ব। পরিবার, শিক্ষক, প্রযুক্তি কোম্পানি, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সমাজকে একত্রিত হয়ে এই সংকট মোকাবেলায় কাজ করতে হবে।


তথ্যসূত্র : এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত তথ্য সংগৃহীত হয়েছে: The New York Times, CNN, BBC, NPR, The Washington Post, BMJ, RAND Corporation, Stanford Medicine, Harvard University, American Psychological Association, Common Sense Media এবং বিভিন্ন আদালতের মামলার প্রকাশিত দলিল থেকে।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর