সিরিয়া সরকারের সাথে কুর্দি গোষ্ঠীর যুগান্তকারী চুক্তি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১১:২৫

সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণকারী কুর্দি নেতৃত্বাধীন স্বশস্ত্র মিলিশিয়া জোট একটি চুক্তির মাধ্যমে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) শত্রুতাপূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ করবে। এছাড়াও সীমান্ত চৌকি, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ তেল ও গ্যাসক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ সিরিয়া সরকারের হাতে তুলে দেবে।
চুক্তিতে কুর্দি জনগোষ্ঠীকে সিরিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সকল সিরীয় নাগরিকের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করে।
এসডিএফ কমান্ডার মাজলুম আবদি অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তিনি একে নতুন সিরিয়া গঠনের বাস্তব সুযোগ বলে অভিহিত করেছেন।
সোমবার রাতে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেখানে সকল সিরীয় নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত হবে।
এই চুক্তি অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট শারার সেই লক্ষ্যকে এগিয়ে নেবে, যার মাধ্যমে তিনি বিভক্ত সিরিয়াকে একত্রিত করতে চান। শারার নেতৃত্বাধীন সুন্নি ইসলামপন্থী গোষ্ঠী গত ডিসেম্বরের বিদ্রোহের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।
তবে, পশ্চিম সিরিয়ায় সাম্প্রতিক সহিংসতা দেখিয়েছে যে, দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা সহজ হবে না। আসাদপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হামলার জেরে সরকারি বাহিনীর পাল্টা অভিযানে এক হাজারের বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই আসাদের সংখ্যালঘু আলাওয়ি সম্প্রদায়ের।
চুক্তিটি এসডিএফের সঙ্গে তুরস্ক ও তুরস্ক-সমর্থিত সিরীয় বিদ্রোহীদের সংঘাতও প্রশমিত করতে পারে। তারা এসডিএফকে সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে সরানোর চেষ্টা করছে।
সিরিয়ার ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে এসডিএফ না আসাদের শিবিরে ছিল, না বিদ্রোহীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছিল। বর্তমানে তারা উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার ৪৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বেশি ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। তারা ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সহায়তায় আইএস (ইসলামিক স্টেট) গোষ্ঠীকে পরাজিত করেছিল। এসডিএফ উত্তর ও পূর্ব সিরিয়ার স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা রোজাভা নামেও পরিচিত।
বর্তমানে ১০ হাজার আইএস যোদ্ধাকে এসডিএফ পরিচালিত কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। ৪৬ হাজার নারী ও শিশুসহ আইএস সংশ্লিষ্ট লোকজনকে বিভিন্ন শিবিরে বন্দি রাখা হয়েছে।
আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে এসডিএফ বারবার হুঁশিয়ার করেছে যে, তুরস্ক-সমর্থিত বিদ্রোহীদের হামলার কারণে তারা তাদের সেনাদের কারাগার রক্ষার বদলে লড়াইয়ে ব্যস্ত রাখতে বাধ্য হচ্ছে, যা আইএস পুনরুত্থানের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
তুরস্ক এসডিএফের সবচেয়ে বড় মিলিশিয়া কুর্দি পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটসকে (ওয়াইপিজি) সন্ত্রাসী সংগঠন বলে মনে করে। তুরস্কের দাবি, ওয়াইপিজি আসলে নিষিদ্ধঘোষিত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) একটি শাখা, যারা তুরস্কে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে।
তবে, পিকেকের কারাবন্দি নেতা সম্প্রতি একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও সোমবারের চুক্তির ব্যাপারে তুরস্ক তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ মিলিয়ন কুর্দি তুরস্ক, ইরাক, সিরিয়া, ইরান ও আর্মেনিয়ার সীমান্তবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করে। তারা মধ্যপ্রাচ্যের চতুর্থ বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী। কিন্তু কখনোই স্থায়ী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
সিরিয়ায় কুর্দিরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। আসাদ পরিবারের শাসনামলে তারা দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল।
ওএফ