মাহমুদ খলিলকে লুইজিয়ানার আটক কেন্দ্রে রাখার নির্দেশ আদালতের

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫২
-67d256824387c.jpg)
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি আদালতে প্রক্রিয়াগত শুনানির পর ফিলিস্তিনি কর্মী মাহমুদ খলিলকে আপাতত লুইজিয়ানার একটি আইসিই (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) আটক কেন্দ্রে রাখার আদেশ দিয়েছেন আদালত। কয়েকদিন আগেই ট্রাম্প প্রশাসনের চেষ্টায় তাকে নির্বাসিত করার উদ্দেশ্যে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বাসস্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
গত বসন্তে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে তার ভূমিকার কারণে গত শনিবার তাকে গ্রেপ্তার করে আটক রাখা হয়। ট্রাম্প প্রশাসন তার গ্রিন কার্ড বাতিল করেছে বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন, তবে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল বিচারক জেসি ফুরম্যান অবিলম্বে তার নির্বাসন বন্ধ করেছেন যতক্ষণ না তার আইনজীবী ও ফেডারেল সরকার আদালতে হাজির হয়।
বুধবার আদালতে বিচারক ফুরম্যান আদেশ দেন যে খলিলকে তার আইনজীবীদের সঙ্গে অন্তত বুধবার ও বৃহস্পতিবার একটি করে ফোন কল করার সুযোগ দিতে হবে। যাতে তারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মামলার প্রস্তুতি নিতে পারে।
তার আইনজীবী রামজি কাসেম বলেন, আমরা আমাদের মক্কেলের সঙ্গে একবারও কথা বলার সুযোগ পাইনি। তাকে নিউ ইয়র্ক সিটির রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে গ্রেপ্তার করেছে প্রতিশোধস্বরূপ, কারণ তিনি তার প্রথম সংশোধনী অধিকার প্রয়োগ করে গাজাসহ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সরকারের সমালোচনা করেছেন।
কাসেম দাবি করেন, লুইজিয়ানায় স্থানান্তরও আরও এক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ, কারণ তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করছেন।
ন্যায়বিচারের দপ্তরের আইনজীবীরা বলেছেন, তারা মামলাটি নিউ ইয়র্ক থেকে নিউ জার্সি (যেখানে তাকে প্রথমে নেওয়া হয়েছিল) অথবা লুইজিয়ানা (যেখানে তিনি বর্তমানে আটক) স্থানান্তরের চেষ্টা করবে। বুধবারের শুনানিতে আদালত জনাকীর্ণ ছিল। সমর্থকরা কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই লাইন ধরে আদালতে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন।
এ মামলাটি প্রথম নজির হতে পারে যে ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রো-ফিলিস্তিনি আন্দোলনকারীদের টার্গেট করছে।
ন্যায়বিচার দপ্তরের আইনজীবী ব্র্যান্ডন ওয়াটারম্যান আদালতে বলেন, অভিবাসন সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন খলিলের তাৎক্ষণিক নির্বাসনের আশঙ্কা নেই। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খলিলের গ্রেপ্তারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন যে তিনি আরও অনেকের সন্ধান করবেন এবং নির্বাসিত করবেন।
ট্রাম্প সোমবার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেন, ‘যদি আপনি সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করেন, নিরীহ পুরুষ, নারী ও শিশুদের হত্যা সমর্থন করেন, তাহলে আপনার উপস্থিতি আমাদের জাতীয় ও পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থি এবং আপনাকে এখানে স্বাগত জানানো হবে না।’
তবে হোয়াইট হাউস এখনো খলিলের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের কোনো প্রমাণ দেয়নি এবং এটি স্পষ্ট নয় যে তাকে কোনো অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে কি না।
খলিলের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন, নিউ ইয়র্ক থেকে তাকে লুইজিয়ানার আটক কেন্দ্রে সরানো ‘প্রতিশোধমূলক ও অসাংবিধানিক’ কারণ এটি তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করার প্রয়াস।
এক অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ জন স্যান্ডওয়েগ বলেছেন, এ ধরনের অভিবাসন আইনের প্রয়োগ অত্যন্ত বিরল, বিশেষত রাজনৈতিক মতামত বা বক্তব্যকে সন্ত্রাসবাদ আইনের আওতায় এনে গ্রিন কার্ডধারীকে নির্বাসিত করার প্রচেষ্টা বিরল ও সাংবিধানিক প্রশ্ন উত্থাপন করে।
খলিলের স্ত্রী নূর আব্দাল্লাহ, যিনি একজন মার্কিন নাগরিক এবং আট মাসের গর্ভবতী। তিনি বলেছেন যে তার স্বামী ‘তার শক্তির স্তম্ভ।’
আব্দাল্লাহ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ আমার আত্মাকে ছিঁড়ে নিয়েছে, যখন তারা আমার স্বামীকে হাতকড়া পরিয়ে একটি অচিহ্নিত গাড়িতে তুলে নেয়, তারা দুজনই রমজানের ইফতার শেষে বাসায় ফিরছিলেন তখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে উল্লেখ করেন।
খলিলের সমর্থকরা একটি তহবিল সংগ্রহ ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন, যা বুধবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার অনুদান সংগ্রহ করেছে।
খলিলের পক্ষ থেকে তার আইনজীবীদের শেয়ার করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে ‘এটি তার চরিত্রের প্রমাণ এবং তার সঙ্গে যা ঘটছে তার প্রতি গণমানুষের গভীর ন্যায়বিচারের দাবি’।
ইমা/এমবি