Logo

আন্তর্জাতিক

বিশেষ সুবিধা বাতিল

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে ১৪৬০০ আফগান নাগরিকের

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৯

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে ১৪৬০০ আফগান নাগরিকের

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হাজার হাজার আফগান নাগরিকের বিশেষ সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ক্যামেরুনের বাসিন্দাদের জন্যও এই আইন বাতিল হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তর (ডিএইচএস) জানিয়েছে, হাজার হাজার আফগান ও ক্যামেরুনবাসীর সাময়িক নির্বাসন সুরক্ষা (টিপিএস) তুলে নেওয়া হবে। 

স্বরাষ্ট্র সচিব ক্রিস্টি নোয়েম বলেন, আফগানিস্তান ও ক্যামেরুনের বর্তমান অবস্থা টিপিএস প্রোগ্রাম চালু রাখার জন্য যথেষ্ট নয়।

ডিএইচএসের সহকারী সচিব ট্রিশা ম্যাকলাফলিন এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানান।

এই সিদ্ধান্তের ফলে মে মাসে আনুমানিক ১৪ হাজার ৬০০ আফগান ও জুন মাসে প্রায় ৭ হাজার ৯০০ ক্যামেরুনবাসী আর টিপিএসের আওতায় থাকছেন না।

টিপিএস বা অস্থায়ী সুরক্ষা সুবিধা সাধারণত সেসব দেশের নাগরিকদের দেওয়া হয়, যারা নিজ দেশে সশস্ত্র সংঘাত কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কারণে নিরাপদে নিজ দেশে ফিরতে অক্ষম।

এই সুবিধা সাধারণত ১৮ মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকে। টিপিএস সুবিধাপ্রাপ্তরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পান। তারা বহিষ্কারের বিরুদ্ধেও সুবিধা পেয়ে থাকেন।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব আলেজান্দ্রো মায়োরকাস আফগান নাগরিকদের টিপিএস আরও ১৮ মাস বাড়িয়ে ২০ মে পর্যন্ত করেছিলেন। কিন্তু মার্চে সচিব নোয়েম নতুন করে পর্যালোচনা করে টিপিএস বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন। আর ৭ এপ্রিল ক্যামেরুনের জন্য টিপিএস স্ট্যাটাস বাতিলের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

এই মাসের ২৪ এপ্রিল থেকে কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকে আসা প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি অভিবাসীকে দেওয়া অস্থায়ী আইনি অবস্থাও প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এরা সবাই বাইডেন প্রশাসনের সিএইচএনভি নামের স্পনসরশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে এসেছিলেন, যা ট্রাম্প প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছে।

এই কর্মসূচি আওতায় ভেনেজুয়েলা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ৭০০, কিউবা থেকে ১ লাখ ১০ হাজার ৯০০ ও নিকারাগুয়া থেকে ৯৩ হাজার জনেরও বেশি মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

একজন আফগান সাংবাদিক ‘শুকরিয়া’ (ছদ্মনাম), যিনি গত বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। তিনি বলেন, বহিষ্কারের ভয় আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ করে তুলেছে। ঘুমাতে পারি না, পায়ে অসহ্য ব্যথা হয়। ভয় আর দুশ্চিন্তায় আমি সারাক্ষণ কাঁদি।

তিনি সাত মাসের গর্ভবতী। ১০ এপ্রিল ডিএইচএস থেকে একটি ইমেইল পেয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে, আপনার যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময়সীমা শেষ হয়ে এসেছে। এই নোটিশের সাত দিনের মধ্যে আপনার প্যারোল শেষ হয়ে যাবে। আপনি যদি অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ না করেন, তাহলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পদক্ষেপের মুখোমুখি হবেন।

যদিও তার ছোট সন্তানদের বয়সের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সুযোগ রয়েছে। শুকরিয়া ও তার স্বামীর জন্য পথ আরও কঠিন। তিনি বলেন, আমার প্যারোল মানবিক কর্মসূচির আওতায় দেওয়া হয়েছিল। আর আমার আশ্রয় আবেদন এখনো বিচারাধীন।

ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন ও বড় পরিসরে বহিষ্কারের ওপর জোর দিয়ে আসছে। তার প্রথম মাসে ৩৭ হাজার ৬৬০ জনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যা বাইডেন প্রশাসনের সময়কার গড়ের তুলনায় কিছুটা কম হলেও নীতিগতভাবে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। সম্প্রতি যাবিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ দমনের অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন শত শত আন্তর্জাতিক ছাত্রের ভিসা বাতিল করেছে।

এই নীতির অংশ হিসেবে, ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলায় মাহমুদ খলিল নামের একজন স্থায়ী বসবাসকারীকে আটকের পর বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাকে গত ৮ মার্চ থেকে লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সচিব নোয়েম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস বা পড়াশোনার সুযোগ একটি বিশেষাধিকার—যারা সহিংসতা উসকে দেয়, সন্ত্রাসীদের প্রশংসা করে ও ইহুদিদের হয়রানি করে তাদের সেই বিশেষাধিকার কেড়ে নেওয়া উচিত।

তবে, খলিলের আইনজীবী জানিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রে চলমান অন্যায়ের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করবেন।

ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর