Logo

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করে বহিষ্কারের মুখে শিক্ষার্থী

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:০৮

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করে বহিষ্কারের মুখে শিক্ষার্থী

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদ করায় গ্রেপ্তার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া যেতে পারে বলে রায় দিয়েছেন লুইজিয়ানার অভিবাসন আদালতের বিচারক জেমি কোমান্স।

গ্রেপ্তারের প্রায় মাসখানেক পরে স্থানীয় সময় শুক্রবার (১১ এপ্রিল) এই রায় ঘোষণা করেন বিচারক। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন মাহমুদের আইনজীবীরা। আগামী ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত আপিলের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন বিচারক। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এমন খবর দিয়েছে।

অন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মাহমুদ খলিল । ছবি : বিবিসি

গত বসন্তে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংঘটিত বিক্ষোভে জড়িত থাকার কারণে এ বছরের ৮ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল দেশটির অভিবাসন কর্মকর্তারা। এরপর থেকে লুইজিয়ানার জেনা শহরে একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে ছিলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদিবিদ্বেষী বিক্ষোভ বন্ধের অভিযানের প্রথম শিকার ৩০ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি যুবক। মাহমুদ খলিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের গ্রিনকার্ড রয়েছে তার। গ্রেপ্তারের পরই তার গ্রিনকার্ড বাতিলের কথা জানায় ওয়াশিংটন।

শুক্রবারের এই রায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ফিলিস্তিন-সমর্থিত গ্রিনকার্ডধারী ও ভিসাধারীদের কণ্ঠরোধ ও দমনপীড়নের পথ প্রশস্ত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

মাহমুদের আইনজীবী ও আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস-নিউ জার্সির নির্বাহী পরিচালক অমল সিনহা বলেছেন, ‘তাড়াহুড়ো করে দেওয়া আদালতের এই রায় পুরোপুরি ভিত্তিহীন। সরকার পক্ষ নিজেদের সমর্থনে তেমন কোনো প্রমাণই উপস্থাপন করতে পারেনি, আসলে তাদের কাছে কোনো প্রমাণই তো নেই মাহমুদের বিরুদ্ধে।’

এই রায়কে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মতামতের লজ্জাজনক অনুসরণ বলে অভিহিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটসের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ডিয়ালা শামাস।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৫২ সালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের উদাহরণ দিয়ে রুবিও বলেছিলেন, ‘মাহমুদের কার্যকলাপ মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, এজন্য তাকে বিতাড়িত করা উচিত।’

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করার এখতিয়ার তার নেই বলে জানিয়েছেন বিচারক কোমান্স। তাছাড়া মাহমুদকে বিতাড়িত করতে প্রশাসন তাদের যুক্তি প্রমাণ করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

খলিলের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, লুইজিয়ানার যে আদালতে মাহমুদের মামলার শুনানি হয়েছে, সেখানকার বিচারকরা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে এই রায় দিয়েছেন।

তারা জানান, ১৯৫২ সালের অভিবাসন আইনের অধীনে নেওয়া সিদ্ধান্তের ‘যুক্তিসংগত কারণ’ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বিচারকের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। বিচারক সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এদিকে, মাহমুদকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে এই রায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য এই রায়কে উল্লেখযোগ্য বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কারণ গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফিরেই ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছিলেন, গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থি প্রতিবাদী আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এই আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেন।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যম জেটো নিউজের এক খবরে জানা যায়, রায় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে খলিল বলেন, ‘এই আদালত ঠিক সেটিই করেছেন, ঠিক যে উদ্দেশ্যে আমার পরিবার থেকে প্রায় এক হাজার মাইল দূরে আমাকে পাঠিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। আমি আশা করি যে দ্রুততার সঙ্গে আমার ঘটনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, একইরকম যেন মাসের পর মাস আটকে থাকা বন্দিদের বিষয়েও আদালত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়।’

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে গত বসন্তে বিক্ষোভ করায় খলিলের মতো আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছেন অভিবাসন কর্মকর্তারা। তাদেরও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মাহমুদকে গ্রেপ্তারের পর তার আইনজীবী কিংবা তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে না জানিয়েই তাকে লুইজিয়ানাতে স্থানান্তর করা হয়, যদিও তার মামলাটি নিউ জার্সির একটি আদালতে বিচারাধীন ছিল।

এর আগে তার গ্রেপ্তারের ঘটনাটি মার্কিন সংবিধানের প্রথম ও পঞ্চম সংশোধনীর আওতায় দেওয়া বাক্‌স্বাধীনতার সুরক্ষাকে লঙ্ঘন করছে কি না সে বিষয়ে হাবিয়েস পিটিশন করেছিল তার আইনজীবীরা।

শুক্রবারের রায় ঘোষণার পর মাহমুদ খলিলের আইনজীবীরা বলেন, ‘মাহমুদকে বিতাড়ন করা আটকাতে লড়াই এখনও শেষ হয়নি। তার পরিবারের কাছে তাকে ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’

ডিআর/বিএইচ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর