Logo

আন্তর্জাতিক

ইয়েমেনের রাস ইসা বন্দরে মার্কিন হামলা, নিহত বেড়ে ৭৪

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ২১:১৩

ইয়েমেনের রাস ইসা বন্দরে মার্কিন হামলা, নিহত বেড়ে ৭৪

ইয়েমেনের রাস ইসা তেলবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের চালানো বিমান হামলায় অন্তত ৭৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা। একে ইয়েমেনে চালানো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম রক্তক্ষয়ী হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হুথি নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনিস আল-আসবাহি শুক্রবার জানান, বৃহস্পতিবার চালানো ওই হামলায় আরও ১৭১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে উদ্ধার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়েছেন।

মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানিয়েছে, হুথিদের জ্বালানি ও আয়ের উৎস বিচ্ছিন্ন করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে সেন্টকম জানায়, মার্কিন বাহিনী হুথি সন্ত্রাসীদের জন্য জ্বালানির উৎস সরিয়ে দিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। এই হামলার লক্ষ্য ছিল হুথিদের অর্থনৈতিক শক্তির উৎসকে দুর্বল করা।

আল জাজিরার সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-আত্তাব ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে জানান, বেশ কয়েকটি স্থানে মার্কিন বিমান হামলা চালানো হলেও রাস ইসা বন্দরের চারপাশেই সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রথম চারটি বিমান হামলা চালানো হয় যখন মানুষ কাজ করছিল। এ সময় কর্মীরা সম্পূর্ণ হতচকিত হয়ে পড়েন বলেন তিনি উল্লেখ করেন। হামলার সময় সেখানে ট্রাক চালকরাও উপস্থিত ছিলেন।

এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় হুথিরা ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি ও দুটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘোষণা দেয়। শুক্রবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, ইয়েমেন থেকে ছোঁড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র তারা ভূপাতিত করেছে।

সানা শহরে আমেরিকা ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে হুথি সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেন, আমেরিকার সামরিক উপস্থিতি ও নিরবচ্ছিন্ন আগ্রাসন আমাদের দেশে আরও পাল্টা হামলা, সংঘর্ষ ও প্রতিরোধ ডেকে আনবে।

ইয়েমেনের মোট আমদানি পণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ ও মানবিক সহায়তার ৮০ শতাংশ আসে রাস ইসা, হোদেইদা এবং আস-সালিফ বন্দরের মাধ্যমে।

শুক্রবার ভোরে হুথি-ঘনিষ্ঠ আল মাসিরাহ টিভির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, রাস ইসা বন্দরের উপরে বিশাল বিস্ফোরণ ও আগুন রাতের আকাশ আলোকিত করে তুলছে। এরপর ধ্বংসাবশেষ, আগুন ও এক নিহত বেসামরিক ব্যক্তির ছবি দেখানো হয়।

ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল, আমেরিকার আগ্রাসনের অপরাধের প্রাথমিক দৃশ্য, যেখানে রাস ইসা তেলবন্দর লক্ষ্য করে চালানো হামলায় বেশ কিছু শহীদ ও অসংখ্য বন্দরের কর্মচারী আহত হয়েছেন।

আল মাসিরাহ টিভির অন্যান্য ভিডিওতেও ধ্বংসস্তূপের ছবি, আগুনের দৃশ্য ও গুরুতরভাবে দগ্ধ বন্দরের কর্মীদের সাক্ষাৎকার দেখা যায়।

এই হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হুথিদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণের পর শুরু হয়েছে। মার্চ মাসে দু’দিনের মার্কিন হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছিল বলে হুথি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মতে, রাস ইসা একটি অপরিহার্য ও প্রতিস্থাপন-অযোগ্য তেল পাইপলাইন ও বন্দর হিসেবে বিবেচিত।

আল মাসিরাহ টিভির এক প্রতিবেদক জানান, দুর্ঘটনাস্থলে চিকিৎসা সহায়তা দিতে এবং আগুন নেভাতে সিভিল ডিফেন্স ও ইয়েমেনি রেড ক্রিসেন্টের সদস্যদের পাঠানো হয়েছে।

হুথি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসের আল-আতিফি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমেরিকার এই হামলা গাজার প্রতি আমাদের সমর্থন থেকে সরাতে পারবে না, বরং এটি আমাদের আরও দৃঢ় ও অবিচল করবে।’

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হুথিরা শতাধিক হামলা চালিয়েছে এমন জাহাজের উপর, যেগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত। তারা বলছে, এই হামলা গাজায় চালানো ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাব।

যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ারি দিয়েছে, হুথিরা যদি লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা বন্ধ না করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রও হামলা অব্যাহত রাখবে।

ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর