Logo

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়

বরাদ্দ রাখা ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদানের ওপর স্থগিত করায় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের দাবি মেনে নেবে না।

গত ১১ এপ্রিল হার্ভার্ডকে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নেতৃত্ব ও নীতিগত ব্যাপক সংস্কার, ভর্তি নীতিতে পরিবর্তন, ক্যাম্পাসে বৈচিত্র্যবিষয়ক মূল্যায়ন এবং কিছু ছাত্র সংগঠনের স্বীকৃতি বাতিলের দাবি জানায়। প্রশাসনের অভিযোগ, গত বছর গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতায় ক্যাম্পাসে যে বিক্ষোভ হয়েছিল, তাতে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়লেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।

হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার জানান, তারা এসব দাবি মেনে নেবে না। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকার তাদের অনুদান বন্ধ করে দেয়।

বুস্টনের ফেডারেল আদালতে দায়েরকৃত মামলায় বলা হয়, ‘সরকার ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে উদ্বেগের সঙ্গে গবেষণাখাতে অর্থায়ন বন্ধের কোনো যুক্তিযুক্ত সম্পর্ক দেখাতে পারেনি। আমেরিকানদের জীবন বাঁচাতে, সাফল্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গবেষণা চলে। এর উদ্ভাবনের কারণে বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্ব ধরে রাখতে ভূমিকা রাখে।’

মামলায় আরও বলা হয়, ‘সরকার এই অর্থ বন্ধের কারণে হার্ভার্ডের গবেষণা কার্যক্রম, গবেষণার সুবিধাভোগীরা এবং জাতীয় স্বার্থে উদ্ভাবন ও অগ্রগতির উপর এর প্রভাব স্বীকারই করেনি।’

হার্ভার্ডের অভিযোগ, এই অনুদান স্থগিতাদেশ ‘অযৌক্তিক ও খামখেয়ালি’। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত আইন টাইটেল VI লঙ্ঘন করে।

এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউস মুখপাত্র হ্যারিসন ফিল্ডস বলেন, ‘হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য ফেডারেল সহায়তার সুবিধা দীর্ঘদিন চলেছে। করদাতাদের অর্থে চলা একটা সুবিধা, অধিকার নয়। আর হার্ভার্ড সেই শর্ত পূরণ করতে পারছে না।’

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য হার্ভার্ড এই অভিযান চালানোর পথে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিপাবলিকানদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন লিবারেল মতাদর্শ ও ইহুদিবিদ্বেষের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই তারা গবেষণা তহবিল বন্ধ করে চাপ সৃষ্টি করছে। যদিও এই গবেষণাগুলোই বহু যুগান্তকারী আবিষ্কারের উৎস।

চিঠিতে প্রশাসন হার্ভার্ডকে আরও নির্দেশ দেয়—বিক্ষোভকারীদের ওপর কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আমেরিকান মূল্যবোধের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন কিনা তা যাচাই করতে।

এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিবর্তন, ভর্তি নীতির সংস্কার এবং কিছু ছাত্র সংগঠনের স্বীকৃতি বাতিলের আহ্বান জানানো হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতেও একাধিক পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়।

গত সোমবার হার্ভার্ড জানায়, তারা এই দাবি মানবে না, কারণ এটি সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করে। পরদিন ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে প্রশ্ন তোলেন, হার্ভার্ডের কর-ছাড়ের মর্যাদা থাকা উচিত কি না, ‘যদি তারা রাজনৈতিক, আদর্শিক ও সন্ত্রাসবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত চিন্তাভাবনাকে সমর্থন দিয়ে যায়?’

এই মামলাটি এমন এক সময় এলো, যখন এর আগে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রফেসরস নামক একটি সংগঠনও আরেকটি মামলা করেছিল যাতে হার্ভার্ডের অনুদান পর্যালোচনার সিদ্ধান্তকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

হার্ভার্ড দাবি করছে, সরকারের এই চাপে কেবল তারা নয়, বরং আমেরিকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে—যা দীর্ঘদিন ধরে সুপ্রিম কোর্ট স্বীকৃতি দিয়ে এসেছে।

সোমবার হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট গারবার বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘আজ আমরা সেই মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়িয়েছি, যা আমেরিকার উচ্চশিক্ষাকে বিশ্বজুড়ে আলোর দিশারি করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকারের অন্যায্য হস্তক্ষেপ ছাড়াই দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আইনগত দায়িত্ব পালন করে সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।’

প্রাক্তন ছাত্রী অনুরিমা ভরগবাও এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন তাদের ক্ষমতার লোভে এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে যে বেআইনি আক্রমণ চালাচ্ছে, এই মামলা তারই জবাব। গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে যে অর্থ বন্ধ করা হয়েছে, তা বহু মানুষের জীবন রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়।

১৬শর বেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গঠিত আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশন হার্ভার্ডের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট টেড মিচেল বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এটা স্পষ্ট, প্রশাসনের পদক্ষেপ আইনের শাসন ও ন্যায্য প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করেছে। আমরা হার্ভার্ডকে এই সাহসী পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানাই এবং আশাবাদী আদালত একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে—যাতে গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর অনুচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ হয়।’

ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর