পাহেলগাম হামলার বদলা নিতে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ ক্ষমতা দিলেন মোদি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ২২:০১

নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে হাই প্রোফাইল নিরাপত্তা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় /ছবি : সংগৃহীত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে কবে, কীভাবে ও কোথায় প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, সে বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে এনডিটিভি এ তথ্য জানায়।
মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে হাই প্রোফাইল নিরাপত্তা অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহান ও তিন বাহিনীর প্রধান।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আঘাত হানা আমাদের জাতীয় সংকল্প।
তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন।
এই বৈঠকের কিছুক্ষণ পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও শাসক দল বিজেপির আদর্শিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছান।
সূত্রগুলো জানায়, মোদির এই বার্তা কার্যত ২৬ নিরীহ মানুষের প্রাণ নেওয়া সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামরিক প্রতিক্রিয়ায় সবুজ সংকেত।
২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের বালাকোটে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হানা চালিয়েছিল ভারত। ওই শিবিরগুলো জইশ-ই-মোহাম্মদ নামে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী পরিচালনা করত, যাদের সাহায্য করছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
ছয় বছর পর আবারও পাকিস্তানভিত্তিক এক পরিচিত নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী — লস্কর-ই-তৈয়বা — এই হামলার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি উঠেছে। তাদের ছদ্মবেশী সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে ভারত।
এদিকে, ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মতে, প্রাপ্ত প্রমাণগুলো ফের পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, জাপানসহ ইউরোপীয় কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের এই প্রমাণ ইতোমধ্যেই দেখানো হয়েছে।
ভারত ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
ভিসা বাতিল, পানি সরবরাহ বন্ধ
প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার পাকিস্তানিদের জন্য দেওয়া সব ভিসা বাতিল করেছে — শুধুমাত্র পাকিস্তানি হিন্দু ও দীর্ঘমেয়াদে অবস্থানকারী ব্যতিক্রম। চিকিৎসা ভিসাও বাতিল করা হয়েছে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) পর্যন্ত সব বৈধ ভিসা বাতিল হওয়ায় ভারতের সীমান্ত চেকপোস্টগুলোতে বিশেষ করে আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে ভিড় জমেছে পাকিস্তানি নাগরিকদের।
বৃহস্পতিবার থেকে ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর প্রায় এক হাজার পাকিস্তানি নাগরিক ভারত ছেড়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজে রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের এই আদেশ কার্যকরে আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও এক কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে, ভারত সিন্ধু পানিচুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে — যা ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, যার মাধ্যমে পাকিস্তান প্রায় ৮৫ শতাংশ পানি পেত।
চুক্তি স্থগিত হওয়ায় পাকিস্তান একে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল বলে দাবি করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদও ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে এবং শত শত ভারতীয়কে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।
এছাড়াও পাকিস্তান একাধিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, যেমন- সিমলা চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের এক শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সম্ভাব্য যুদ্ধের ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে (যার ইউটিউব সম্প্রচার ইতিমধ্যেই ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে) পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ বলেন, আগামী কয়েকটি দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
ওএফ