Logo

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে ভারত, বিস্ফোরক অভিযোগ

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৩:১৯

পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে ভারত, বিস্ফোরক অভিযোগ

কাশ্মীরের পাহেলগাঁও হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত এখন পর্যন্ত ‘একটি প্রমাণও’ হাজির করতে পারেনি। বরং ভারত নিজেই পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পাকিস্তান।

দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ও ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনসের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী মঙ্গলবার এ অভিযোগ করেন।।

গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ এক হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এটি ২০০০ সালের পর অঞ্চলটিতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স বা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট শুরুতে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা সরাসরি অস্বীকার করে।

ভারত দাবি করে, হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদত রয়েছে, যদিও তারা এ দাবির পক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ দেয়নি। পাকিস্তান বরাবরই এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, পাহেলগাঁও ঘটনার সাত দিন পেরিয়ে গেলেও ভারত এখনো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করা ভিত্তিহীন অভিযোগের পক্ষে একটি প্রমাণও দেয়নি।

তিনি জানান, আমরা আজ প্রমাণ দেখাব কীভাবে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একটি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে। সন্ত্রাসীদের বিস্ফোরক, আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ও অন্যান্য সামগ্রী সন্ত্রাসীদের দেওয়া হচ্ছে। আর এসব সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য শুধু সেনাবাহিনী নয়, পাকিস্তানের সাধারণ মানুষও।

তিনি বলেন, উপস্থাপিত তথ্য কেবল ভারতের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসের একটি ছোট অংশ মাত্র।

জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, ২৫ এপ্রিল ঝিলাম বাসস্ট্যান্ডের কাছে এক পাকিস্তানি নাগরিক, যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রশিক্ষিত ও মদতপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি আইইডি, দুটি মোবাইল ফোন ও ৭০ হাজার রুপি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তার বাড়ি থেকে পাওয়া যায় ভারতীয় উৎসের একটি ড্রোন ও ১০ লাখ রুপি নগদ অর্থ।

ফরেনসিক বিশ্লেষণে এসবের চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে যা যেকোনো নিরপেক্ষ সংস্থা পরীক্ষা করতে পারে।

তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসীর মদতদাতা ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও) সুবেদার সুকভিন্দর। তিনি আইইডি পাঠিয়েছিলেন এবং নির্দিষ্ট স্থানে তা সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জেনারেল চৌধুরী আরও বলেন, তদন্তে চারজন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা হলেন- কাশ্মীরে নিযুক্ত সেনা কমান্ডার মেজর সন্দীপ ভার্মা ওরফে সামীর, সুবেদার সুকভিন্দর ওরফে সিকান্দার, হবিলদার অমিত ওরফে আদিল আমান ও আরেকজন ভারতীয় সেনাসদস্য।

তিনি মেজর সন্দীপ ও সন্ত্রাসী আব্দুল মজিদের কথোপকথনের একটি অডিও প্রকাশ করেন। যেখানে তারা অর্থ প্রদানের পদ্ধতি ও বেলুচিস্তান থেকে লাহোর পর্যন্ত সন্ত্রাসী তৎপরতার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছেন।

আইএসপিআর প্রধান বলেন, এটাই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসের অকাট্য প্রমাণ। এটা শুধু একটি সেল থেকে সংগৃহীত, আরও অনেক কিছু রয়েছে।

তিনি জানান, এই সন্ত্রাসী চারটি আইইডি হামলা চালিয়েছে, যা ড্রোনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব কর্মকাণ্ড ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ নয়, বরং সরাসরি ভারতীয় সেনাবাহিনী করছে।

তিনি বলেন, পাহেলগাঁও ঘটনার পর ২২ এপ্রিল নাদালা এলাকার একটি অবস্থান থেকে আইইডি সংগ্রহ করে ২৩ এপ্রিল একটি জনবহুল বাসস্ট্যান্ডে হামলা চালানো হয়। ওই সন্ত্রাসী ২৫ এপ্রিল ধরা পড়ে।

জেনারেল চৌধুরী আরও জানান, পাহেলগাঁও হামলার পর ভারত তাদের সব এজেন্ট ও জঙ্গি গোষ্ঠী —বিশেষ করে বেলুচিস্তানে সক্রিয়রা ও ‘ফিতনা আল-খারেজি’ নামে পরিচিত টিটিপিকে সক্রিয় করে তোলে।

তিনি জানান, দুই দিন আগে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী খাইবার পাখতুনখোয়ার উত্তর ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়া ৫৪ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে।

সর্বশেষ তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ৭১ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে, মঙ্গলবার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আজাদ কাশ্মীরের এলওসি এলাকায় একটি ভারতীয় কোয়াডকপ্টার ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে, বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়। লাইন অব কন্ট্রোলে টানা পাঁচ রাত ধরে ভারত-পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি চলছে। যা চার বছর শান্ত থাকার পর নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভি বলেন, সবকিছু নজরদারির মধ্যে রয়েছে। যদি কোনো অনুপ্রবেশ ঘটে, তবে পাকিস্তান তার যথাযথ জবাব দেবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ভারতের নির্বাচনী পরিস্থিতির সঙ্গে এই উত্তেজনার যোগসূত্র থাকতে পারে, কারণ ভারত সরকারের অনেক উদ্দেশ্য রয়েছে।

জাফর এক্সপ্রেস হামলায় ভারতের সংশ্লিষ্টতা
জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তান মিশন আজ জানিয়েছে, জাফর এক্সপ্রেসে হামলার ঘটনায় তাদের হাত থাকার ‘বিশ্বস্ত প্রমাণ’ রয়েছে। যা প্রমাণ করে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দ্বারা এই হামলা পরিচালিত ছিল।

গত ১১ মার্চ বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) সন্ত্রাসীরা পেশাওয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে অতর্কিতে হামলা চালায়। ট্রেনটিতে ৪৪০ জন যাত্রী ছিলেন। হামলাকারীরা গুলি চালিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে।

এরপর নিরাপত্তা বাহিনী দুই দিনব্যাপী অভিযান চালায়, যা ১২ মার্চ শেষ হয়। আইএসপিআর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, অভিযানে মোট ৩৩ জন সন্ত্রাসীকে নির্মূল করা হয়েছে এবং শেষ উদ্ধারপর্বে কোনো যাত্রী আহত হননি।

ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর