মিশিগানে বাইডেনসহ বিচারকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়লেন ট্রাম্প

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২১

দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিন পূর্তিতে মিশিগানে আয়োজিত এক নির্বাচনী সমাবেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ার জেরোম পাওয়েল এবং আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়লেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মঙ্গলবারের (২৯ এপ্রিল) এই ভাষণে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের উদ্দেশে একের পর এক তোপ দাগেন ট্রাম্প।
ভাষণের শুরুতেই তিনি বাইডেনকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘ওই লোকটা কীভাবে প্রেসিডেন্ট হলো, কেউ কি ব্যাখ্যা করতে পারবেন? এটা কীভাবে হলো?’
তিনি অভিযোগ করেন, পোলিং সংস্থাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে বেশিসংখ্যক ডেমোক্র্যাট অন্তর্ভুক্ত করে তার রেটিং কমিয়ে দেখাচ্ছে। এরপর জনতার উদ্দেশে নিজেই ‘পোল’ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘স্লিপি জো না ক্রুকড জো, কে ভালো?’
ট্রাম্প দাবি করেন, বাইডেন তার নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের জন্য ‘অটোপেন’—অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় কলম ব্যবহার করেছেন, যা প্রমাণ করে প্রকৃত ক্ষমতা বাইডেনের হাতে নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, অটোপেন চালানো ব্যক্তিই প্রকৃত প্রেসিডেন্ট ছিলেন, বাইডেন কিছুই জানতেন না।
এরপর ফেড চেয়ার জেরোম পাওয়েলের দিকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ফেডকে সম্মান করতে চাই, কিন্তু সুদের হারের ব্যাপারে আমি তাকে অনেক বেশি জানি।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ফেডের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তটি ছিল বাইডেনকে রাজনৈতিক সুবিধা দিতে নেওয়া একটি পক্ষপাতমূলক পদক্ষেপ। এক সপ্তাহ আগেই তিনি পাওয়েলকে ‘মেজর লুজার’ বলে আখ্যা দেন।
নিজ প্রশাসনের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে দেওয়া বিচারকদের রায় নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি জানান, তার শত শত নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে প্রায় ২৫০টি মামলার মুখে পড়তে হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বিতর্কিত একটি আদেশের আওতায়, ১৮ শতকের ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার শত শত অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করে এল সালভাদরের একটি কুখ্যাত কারাগারে পাঠানো হয়।
এই প্রক্রিয়ায় একটি বিশেষ ঘটনার উল্লেখ করেন ট্রাম্প—কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়া নামের এক অভিবাসীকে ‘প্রশাসনিক ভুলে’ পাঠানো হয় এল সালভাদরে। যদিও হোয়াইট হাউস আদালতে এ কথা স্বীকার করেছিল, পরে তারা সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করে এবং সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে ছুটিতে পাঠায়।
মামলাটি এখন সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালত গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দিলেও প্রশাসন সেই আদেশ বাস্তবায়নে এখনো গড়িমসি করছে।
এই সমাবেশ ছিল দায়িত্ব গ্রহণের পর হোয়াইট হাউসের বাইরে ট্রাম্পের প্রথম বড় নির্বাচনী প্রচারণা। তিনি দাবি করেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করার অন্যতম কারণ ছিল তার অভিবাসননীতি। কিন্তু এখন আদালত সেই নীতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আদালত বলছে এগুলো কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আমি মনে করি না তারা পার পাবে।’
সমাবেশে নিজের প্রথম ১০০ দিনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডও তুলে ধরেন ট্রাম্প। এর মধ্যে ছিল—অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপক বিতাড়ন, “মেক আমেরিকা হেলদি অ্যাগেইন” কমিশন গঠন, কেবল দুটি লিঙ্গের স্বীকৃতি, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রত্যাহার, এবং ফেডারেল চাকরির ক্ষেত্রে সংস্কার।
কর সংস্কারের বিষয়ে কংগ্রেসকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, তার প্রস্তাবিত বিলের মূল বিষয়গুলো হবে—বকশিশে কর নয়, সোশ্যাল সিকিউরিটি ও ওভারটাইম আয়ে কর নয়, এক ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়ের ছাঁটাই। তিনি মেদিকেয়ার ও সোশ্যাল সিকিউরিটি রক্ষা এবং মেডিকেইডে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দেন।
তবে এই বিল নিয়ে রিপাবলিকানদের মধ্যেই মতবিরোধ রয়েছে, বিশেষ করে মেডিকেইড বাজেট কাটছাঁট নিয়ে।
কেই/এমজে