গাজা নিয়ে ভয়াবহ পরিকল্পনা নেতানিয়াহুর, সীমান্তে হাজারো সেনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫, ০০:৫৬

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হাজার হাজার রিজার্ভ সেনাকে ডেকে পাঠিয়েছে /ছবি : সংগৃহীত
ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান আরও ব্যাপক ও জোরদার করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা সীমান্তে হাজার হাজার রিজার্ভ সেনাকে ডেকে পাঠিয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজায় বন্দি থাকা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা এবং হামাস যোদ্ধাদের পরাজিত করার লক্ষ্যে তারা চাপবৃদ্ধি করছে।
সমালোচকদের মতে, যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর সাম্প্রতিক এই সামরিক অভিযান বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এই যুদ্ধের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সামরিক বাহিনী নতুন এলাকায় অভিযান চালাবে। মাটির ওপর ও নিচের সমস্ত অবকাঠামো ধ্বংস করবে বলে জানিয়েছে।
রোববার ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সামরিক অভিযানের সম্প্রসারণের অনুমোদন দেওয়ার কথা রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একটি নতুন যুদ্ধবিরতি ও হামাসের হাতে বন্দি থাকা ৫৯ জন জিম্মির মুক্তির বিষয়ে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলি এসব বন্দীদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হামাসের সঙ্গে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল পুনরায় অভিযান শুরুর পর থেকে কোনো ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পাননি। এরপর থেকে ইসরায়েল গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করেছে, যার ফলে আবারও লাখো গাজাবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
ইসরায়েল বলেছে, হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করাই তাদের লক্ষ্য। এই কৌশলের মধ্যে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে মানবিক সাহায্য অবরোধও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলো খাদ্য, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের কথা জানিয়েছে। তারা বলেছে, গাজার উপর নীতিগতভাবে দুর্ভিক্ষ চাপানো হয়েছে, যা যুদ্ধাপরাধের শামিল। যদিও ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই বিস্তৃত অভিযান ক্লান্ত রিজার্ভ সেনাদের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে যুদ্ধের শুরু থেকে পাঁচ বা ছয়বার ডেকে পাঠানো হয়েছে।
নতুন এই অভিযান জিম্মিদের পরিবারের উদ্বেগও বাড়াবে, যারা হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ তাদের মতে জীবিতদের বাঁচানোর এটাই একমাত্র উপায়।
এই পদক্ষেপটি গাজায় নেতানিয়াহুর আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে নতুন প্রশ্নও তৈরি করবে। জিম্মিদের পরিবার ও বিরোধীরা প্রায়শই তাকে চুক্তির আলোচনা বানচাল এবং রাজনৈতিক উদ্দেশে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ করেছেন, যা তিনি অস্বীকার করেছেন।
যুদ্ধ শুরুর প্রায় ১৯ মাস পরেও তিনি কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উপস্থাপন করেননি।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সামরিক বাহিনী গত শুক্রবার গাজায় তাদের পরিকল্পিত পর্যায়ক্রমিক অভিযানের বিষয়ে নেতানিয়াহুকে অবহিত করেছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, হাজার হাজার ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনা চিঠি স্বাক্ষর করে নেতানিয়াহুর সরকারের কাছে যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি চুক্তিতে মনোযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় সংঘাত বন্ধের দাবিতে ইসরায়েলজুড়ে নতুন করে বিক্ষোভ হয়েছে।
গাজায় বন্দি থাকা এক ইসরায়েলি জিম্মির মা এই যুদ্ধকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে অভিহিত করেছেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রোববার জানিয়েছে, গাজায় আরও দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানায়, ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের প্রধান টার্মিনালের কাছে পড়েছে।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জন নিহত ও আরও ১২৫ জন আহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আন্তঃসীমান্ত হামলার জবাবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অভিযান শুরু করে। হামাসের হামলায় প্রায় ১২ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ৭ অক্টোরব থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫২ হাজার ৫৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২ হাজার ৪৩৬ জন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে চালানো ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।
ওএফ