Logo

আন্তর্জাতিক

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ইসরায়েলি হারপ ড্রোন, যা জানা গেল

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ১৪:৫২

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ইসরায়েলি হারপ ড্রোন, যা জানা গেল

ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ হারপ ড্রোন তৈরি করে /ছবি : সংগৃহীত

পাকিস্তানের করাচি ও লাহোরের মতো বড় শহরেও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ভারত। বুধবার দিবাগত রাত থেকে এসব ড্রোন হামলা চালানো হয় দাবি করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, পাকিস্তান এ পর্যন্ত ১২টি ‘হারপ’ ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার সকালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ভারতের এই ড্রোন পাঠানো একটি গুরুতর উসকানি। এ ধরনের নগ্ন আগ্রাসন চলছে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় থেকে তা প্রতিরোধ করছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সাংবাদিকদের সামনে ধ্বংস হওয়া ড্রোনগুলোর ধ্বংসাবশেষের ছবি প্রদর্শন করেন।

‘হারপ’ ড্রোন কী?‘হারপ’ ড্রোন হলো ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) তৈরি একটি ‘লোইটারিং মিউনিশন’ বা ঘুরে বেড়াতে সক্ষম সশস্ত্র ড্রোন। এটি সাধারণ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের যৌথ আদলে তৈরি। এরা নিজে নিজে লক্ষ্য শনাক্ত করে হামলা চালাতে পারে। আবার মানুষের নিয়ন্ত্রণে থেকেও কাজ করতে পারে।

ভাজ করা পাখাসহ এই ড্রোন ট্রাক বা জাহাজ থেকে নিক্ষেপ করা যায়। এমনকি আকাশ থেকেও নিক্ষেপযোগ্য। এটি একবার নিক্ষেপের পর যদি কোনো লক্ষ্যবস্তু না পায়, তবে নিজেই নিরাপদে অবতরণ করতে পারে।

পাকিস্তানের মেহরান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাহাদ ইরফান সিদ্দিকী। ডনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘হারপ’ ড্রোন হলো সামরিক মানের একটি ড্রোন। এটা তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে হামলা চালাতেও ব্যবহৃত করা যায়।

তিনি বলেন, ‘সাধারণ কৃষি বা বেসামরিক জরিপের কাজে ব্যবহৃত ড্রোনে এমন জ্যামার থাকে, যেগুলো ইউএইচএফ ফ্রিকোয়েন্সি ব্লক করে তাদের মূল নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায়। কিন্তু সামরিক ড্রোনগুলো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই তাদের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্লক করা কঠিন। খুব উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় একমাত্র স্যাটেলাইট ব্লক করেই তা সম্ভব হতে পারে, যদিও এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।’

ড. সিদ্দিকী আরও বলেন, যেসব ড্রোনের কথা এখন আলোচনায় রয়েছে, তা দেখতে অনেকটা কোয়াডকপ্টারের মতো। এগুলো শনাক্ত করা কঠিন হলেও, সাধারণত মারাত্মক নয়।

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, ২৫০ গ্রাম বা তার বেশি ওজনের যেকোনো ড্রোন চালাতে সংশ্লিষ্ট দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স লাগে। এর নিচের ওজনের ড্রোন খেলনা হিসেবে গণ্য হয়। এসব মূলত ফটোগ্রাফি বা বিনোদনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এগুলোর জন্য সাধারণত লাইসেন্স লাগে না।’

তবে, ২৫০ গ্রাম বা তার বেশি ওজনের ড্রোন ব্যবহারে রয়েছে কঠোর নিয়মাবলী। সেনাবাহিনী, বিমানবন্দর কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে এসব ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ। একই নিয়ম আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

ভারতে হারপ ড্রোনটিআরটি গ্লোবালের তথ্যমতে, গত এক দশকে ভারত ইসরায়েল থেকে ২.৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে। যার মধ্যে রয়েছে রাডার, নজরদারি ড্রোন ও যুদ্ধের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র।

হারপ ড্রোন আগে ২০১৬ ও ২০২০ সালে নাগোর্নো-কারাবাখ সংঘাতে ব্যবহৃত হয়। আজারবাইজান এই ড্রোন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে। সেনা বহনকারী একটি বাস লক্ষ্য করে হামলা চালায় এই ড্রোন, এতে অন্তত ছয় সেনা নিহত হয় ও বাসটি ধ্বংস হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, পাহেলগাঁও হামলার জবাব দিতে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামের একটি সামরিক অভিযান চালায় ভারত। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, মাত্র ২৫ মিনিটের এই অভিযানে কোনো বেসামরিক, অর্থনৈতিক বা সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানা হয়নি। টার্গেট ছিল লস্কর-ই-তৈয়বা ও জইশ-ই-মোহাম্মদের জঙ্গি অবকাঠামো।

তবে পাকিস্তান বলছে, বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ইসলামাবাদের দাবি, ছয়টি স্থানে চালানো ওই বিমান হামলায় বেসামরিক লোকজন নিহত হয়েছেন। একাধিক মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভাষ্যমতে, ভারতের কয়েকটি হামলা দেশটির ঘনবসতিপূর্ণ পাঞ্জাব প্রদেশেও আঘাত হেনেছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর এটিই ভারতের সবচেয়ে গভীর সীমানা লঙ্ঘন বলে মনে করছে পাকিস্তান।

ওএফ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

পাকিস্তান ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর