যুদ্ধবিরতি চেষ্টায় অগ্রগতি, মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ০৮:৫০

এডান আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস /ছবি : সংগৃহীত
গাজায় আটক থাকা শেষ জীবিত মার্কিন নাগরিক হিসেবে বিবেচিত এডান আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আলোচনার অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
এই ঘোষণা এসেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের ঠিক আগমুহূর্তে। হামাস আরও বলেছে, এই উদ্যোগ মানবিক সহায়তা প্রবেশে সহায়ক হবে। ইসরায়েলি অবরোধে থাকা গাজা ইতোমধ্যে ৭০ দিন ধরে খাদ্য, ওষুধসহ সব রকম সরবরাহ থেকে বঞ্চিত।
এর আগে হামাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, কাতারে তারা একজন মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র হামাসের পক্ষ থেকে এডান আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা তাদের জানিয়েছে।
আলোচনার সঙ্গে যুক্ত এক সিনিয়র ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, ট্রাম্পের আগমন উপলক্ষে এটি সদিচ্ছার প্রকাশ।
তিনি আরও বলেন, সোমবার সকালে হামাস ও মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে আরেক দফা বৈঠক হওয়ার কথা, যেখানে এডানের মুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। এতে সাময়িকভাবে ইসরায়েলি সামরিক তৎপরতা ও আকাশ থেকে হামলা বন্ধ রাখতে হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে দেওয়া এক পোস্টে এডানের মুক্তির খবর নিশ্চিত করেছেন, যাকে তিনি বলেছেন ‘ঐতিহাসিক’ ও ‘সদিচ্ছার প্রমাণ’।
কে এডান আলেক্সান্ডার?
তেল আবিবে জন্ম নেওয়া কিন্তু নিউ জার্সিতে বেড়ে ওঠা ২১ বছর বয়সী এডান আলেক্সান্ডার ইসরায়েলি সীমান্তের একটি বিশেষ বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।
২০২৩ সালের হামলায় হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করে। তাদের মধ্যে ৫৯ জন এখনও গাজায় অবস্থান করছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে পাঁচজন মার্কিন নাগরিক এবং ধারণা করা হচ্ছিল যে আলেক্সান্ডারই একমাত্র জীবিত মার্কিন বন্দি।
হামাসের লক্ষ্য যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা প্রবেশ
এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রী প্রবেশ নিশ্চিত করতেই তারা এডান আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দিচ্ছে। তাদের লক্ষ্য যুদ্ধ অবসান ঘটিয়ে একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানো।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তারা হামাসের সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরেছে, যা ‘মার্কিনিদের প্রতি সদিচ্ছা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আরও বন্দিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে ইসরায়েলের নীতি অনুযায়ী, ‘যুদ্ধের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযানের মধ্যেই আলোচনা চলবে।’
বন্দিদের পরিবারদের প্রতিক্রিয়া
‘ফ্যামেলিস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম’ নামে বন্দিদের পরিবারদের একটি সংগঠন বলেছে, আলেক্সান্ডারের মুক্তির মধ্য দিয়েই যেন সকল বন্দির মুক্তির ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তির সূচনা ঘটে।
তারা বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব পরিবারের মনে আশা জাগিয়েছেন। তারা এখন নেতানিয়াহুকে অনুরোধ করছে সবার ফেরার নিশ্চয়তা দিতে।
নেতানিয়াহুর প্রতি চাপ বাড়ছে, ট্রাম্প প্রশাসনের হতাশাও
হামাস আগে থেকেই বলে আসছে, তারা কেবল সেই চুক্তিতেই রাজি হবে যাতে যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসান অন্তর্ভুক্ত থাকে—যা বারবার প্রত্যাখ্যান করে আসছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
এদিকে মিডিয়ায় প্রকাশিত নানা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, নেতানিয়াহুর অবস্থানে ট্রাম্প প্রশাসনে অসন্তোষ বাড়ছে। একইসঙ্গে ইসরায়েলের ভেতরেও তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্বার্থে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ উঠেছে।
চুক্তি না হলে সামরিক অভিযান বাড়ানোর হুমকি
ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছাবেন। ইসরায়েল বলেছে, তার সফর শেষ হওয়ার আগেই যদি কোনো চুক্তি না হয়, তবে তারা হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও বাড়াবে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন অভিযানের পরিকল্পনায় রয়েছে পুরো অঞ্চল দখলে নেওয়া, ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণে স্থানান্তর এবং জাতিসংঘের বিরোধিতা সত্ত্বেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ। যা অনেকেই মানবিক সহায়তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার বলেই দেখছে।
গাজার করুণ চিত্র
গত ৭০ দিন ধরে গাজায় কোনো খাদ্য, ওষুধ বা মানবিক সহায়তা ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এটি এক প্রকার ‘ক্ষুধানীতি’র প্রয়োগ ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
হামাস-চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের মাঝামাঝি থেকে নতুন করে চালানো বিমান হামলা ও সামরিক অভিযানে অন্তত ২ হাজার ৭২০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘ বলছে, এ বছরের শুরু থেকেই গাজায় অন্তত ১০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে এবং খাদ্যের দাম বেড়েছে এক হাজার ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১২শ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫০ জনেরও বেশি লোককে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এখনো ৫৯ জন বন্দি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হয়।
হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ৫২ হাজার ৮২৯ জন নিহত হয়েছেন।
ওএফ