Logo

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালাল রাশিয়া

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ১৯:১৩

ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালাল রাশিয়া

ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া /ছবি : রয়টার্স

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রোববারের এই হামলায় বহু বাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং অন্তত একজন নারী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনার ঠিক এক দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, মস্কো রোববার পরবর্তী সময়ে একটি আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করতে পারে বলে তারা ধারণা করছে। এর মাধ্যমে পশ্চিমাদের প্রতি এক ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করাই উদ্দেশ্য। রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

হোয়াইট হাউসে ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত সফরের পর ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন চেষ্টায় থাকা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার রোমে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় পোপ লিওর অভিষেক উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের ফাঁকে তারা বৈঠক করেন।

জেলেনস্কি বৈঠকটিকে ‘গঠনমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং একটি ছবি প্রকাশ করেন। যেখানে দেখা যায়, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা একটি গোল টেবিলে বসে হাসিমুখে কথা বলছেন। ইউক্রেনীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বৈঠকটি ৪০ মিনিট স্থায়ী হয়।

তিনি বলেন, আমি আবারও নিশ্চিত করছি- ইউক্রেন বাস্তব কূটনৈতিক আলোচনায় প্রস্তুত এবং পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে তুলে ধরেছি। জেলেনস্কি নবনির্বাচিত পোপের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপের মুখে ইউক্রেন ও রাশিয়া প্রায় তিন বছর পর সরাসরি আলোচনা করে। ট্রাম্প এই যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দুই পক্ষই এক হাজার জন করে বন্দি বিনিময়ে সম্মত হলেও যুদ্ধবিরতিতে তারা একমত হতে পারেনি। ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের এক সদস্য জানিয়েছেন, রাশিয়া যে শর্ত দিয়েছে তা অসম্ভব।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টদের আলোচনার আগে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডের নেতারা ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা করেছেন। গত সপ্তাহে এই চার ইউরোপীয় নেতা একসঙ্গে কিয়েভ সফর করেছিলেন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞায় ট্রাম্পের সমর্থন চাইছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কিনা, তা ট্রাম্পের ওপর নির্ভর করছে। 

এনবিসি নিউজকে বলেন, আমি মনে করি, দুই পক্ষ যখন আলোচনায় বসবে, তখনই বোঝা যাবে কী হবে।

তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পুতিন সৎভাবে আলোচনা না করলে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে মিলে রাশিয়ার ওপর আরও কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে দ্বিধা করবে না।

রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া ২৭৩টি ড্রোন ইউক্রেনের শহরগুলোতে নিক্ষেপ করেছে যা এযাবৎ রেকর্ড সর্বোচ্চ। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে রাশিয়া সর্বোচ্চ ড্রোন হামলা চালিয়েছিল।

কিয়েভের পশ্চিমে ওবুখিভ এলাকায় নিজের বিধ্বস্ত বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ৪৪ বছর বয়সী নাটালিয়া পিভেন বলেন, আকাশে হামলার সতর্কতা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছেলেকে নিয়ে ঘরের নিচের গুদামে ঢুকে পড়েন এবং প্রথম দফার ড্রোন হামলা থেকে বেঁচে যান।

এরপর তারা পাশের একটি কিন্ডারগার্টেনের বাঙ্কারে গিয়ে আশ্রয় নেন। দ্বিতীয় দফার ড্রোন এসে পুরো গ্রামে আঘাত হানে। তাদের ঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। পাশের বাড়িতে থাকা ২৮ বছর বয়সী এক নারী নিহত হন। 

ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই হামলায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন চার বছর বয়সী শিশু রয়েছে।

পিভেন বলেন, আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার ঘরের দিকে আসা ড্রোনের শব্দটা আমি একেবারে পরিষ্কার শুনতে পেয়েছিলাম।

২০২২ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন যুদ্ধ শুরু করার পর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল ইউক্রেনের পক্ষে। তবে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সে অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে এবং তিনি মস্কোর দৃষ্টিভঙ্গির কিছু অংশ মেনে নিচ্ছেন। তবে কিয়েভ ও ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে যুদ্ধবিরতিতে বাধা দিচ্ছে মূলত রাশিয়াই।

জেলেনস্কি বলেছেন, অন্তত ৩০ দিনের একটি নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির ট্রাম্পের প্রস্তাব তিনি মেনে নিতে প্রস্তুত। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি বিবেচনা করতে পারে, তবে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে—এর মধ্যে কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করাও রয়েছে।

রাশিয়া আরও বলেছে, যেকোনো শান্তি আলোচনায় যুদ্ধের মূল কারণ তুলে ধরতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া, নিরস্ত্রীকরণ ও নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ। কিয়েভের মতে, এসব শর্ত মানা মানেই আত্মসমর্পণ এবং দেশের নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে দেওয়া।

ওএফ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর