পুতিনের সঙ্গে দুই ঘণ্টার ফোনালাপে যা বললেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ০৭:৫৮

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন /ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন খুব শিগগিরই যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে আলোচনায় বসবে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দুই ঘণ্টার ফোনালাপের পর তিনি এই ঘোষণা দেন।
ট্রাম্প ফোনালাপকে ‘বেশ ভালো’ অভিহিত করে বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনকেই শান্তির শর্তাবলি ঠিক করতে হবে।
তবে ট্রাম্পের আশাবাদী বক্তব্য সত্ত্বেও, বাস্তবে যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তি খুব কাছে নয় বলেই মনে হচ্ছে।
পুতিন বলেন, তিনি একটি সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ শান্তিচুক্তির খসড়া নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অপরদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একে ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনার প্রক্রিয়া থেকে সরে না যাওয়ার আহ্বান জানান।
যদিও ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথোপকথন নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন, তবুও ঠিক কবে আলোচনার সূচনা হবে তা জানা যায়নি। এছাড়া পুতিন এখনো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর দাবি অনুযায়ী নির্ধারিত ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কিছু বলেননি।
জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর বলেন, ইউক্রেন সম্পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি চায়। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি মস্কো এখনো প্রস্তুত না হয়, তবে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।’
ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের আগেই জেলেনস্কি বলেছিলেন, ইউক্রেনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত যেন ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে না নেওয়া হয় — এটি ইউক্রেনের জন্য নীতিগত বিষয়। তিনি জানান, মেমোরেন্ডাম সম্পর্কে এখনো ইউক্রেন কিছু জানে না, তবে রাশিয়া থেকে প্রস্তাব এলে তারা নিজের অবস্থান তৈরি করবে।
ট্রাম্প পরে ট্রুথ সোশালে লেখেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করবে।’
তিনি জানান, এই তথ্য তিনি জেলেনস্কিকে দ্বিতীয় একটি ফোনে জানিয়েছেন, যাতে ইউরোপীয় নেতারাও ছিলেন।
তিনি আরও লেখেন, ‘এই প্রক্রিয়ার শর্তাবলি দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা করেই ঠিক করতে হবে। কারণ কেবল তারাই এমন কিছু জানে যা অন্য কেউ জানে না।’
জেলেনস্কি বলেন, এই আলোচনা প্রক্রিয়ায় মার্কিন ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের উপযুক্ত স্তরে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র যদি সরে যায়, তবে শুধু পুতিনই লাভবান হবে।
হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা থেকে সরে আসছে না। তবে তিনি একটি ‘চূড়ান্ত রেখা’ ঠিক করে রেখেছেন, যেখানে গিয়ে তিনি চাপ প্রয়োগ বন্ধ করবেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প বারবার সতর্ক করেছেন, যদি আলোচনায় অগ্রগতি না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে সরিয়ে নেবে। তিনি মনে করেন, পুতিন যুদ্ধ থেকে ক্লান্ত এবং যুদ্ধ শেষ করতে চান।
সোচি শহরের একটি সঙ্গীত বিদ্যালয় সফরকালে ট্রাম্পের ফোন ধরেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একমত হয়েছি যে রাশিয়া একটি শান্তিচুক্তি নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’
তিনি জানান, এই চুক্তি ‘সমঝোতার নীতিমালা ও চূড়ান্ত শান্তিচুক্তির সময়সীমা’ নির্ধারণ করবে। যার মধ্যে একটি সম্ভাব্য সময়সীমার যুদ্ধবিরতিও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে — যদি প্রাসঙ্গিক চুক্তি হয়।
রুশ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, যুদ্ধবিরতির নির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়ে আলোচনা হয়নি, তবে ট্রাম্প তা দ্রুত চায় বলে জোর দিয়েছেন।
ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পর ট্রাম্প ফের জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেন। এই ফোনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েন, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ও ফিনল্যান্ডের নেতারাও অংশ নেন।
ফন ডার লায়েন বলেন, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পের নিরলস প্রচেষ্টার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি জানান, নতুন পোপ লিও যুদ্ধবিরতি আলোচনা আয়োজনে ভ্যাটিকানকে ভেন্যু হিসেবে প্রস্তাব দিয়েছেন। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য নেতারা ইতিবাচকভাবে নিয়েছে।
পুতিন এ মাসের শুরুতে জেলেনস্কির সঙ্গে তুরস্কে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর পোপ আলোচনার জন্য ভ্যাটিকানকে প্রস্তাব দেন।
তবে কিয়েভ বারবার বলেছে, পুতিনের ‘শান্তির ভাষণ’ আসলে ফাঁকা বুলি।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের শীর্ষ সহকারী আন্দ্রিয় ইয়ারমাক বলেন, ‘পুতিন শান্তি চান না, তিনি যুদ্ধই চান।’ রোববার রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর সর্ববৃহৎ ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে কিয়েভ।
ইউক্রেন জানিয়েছে, সম্প্রতি রুশ হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে — যার মধ্যে ৯ জন একটি মিনিবাসে চালানো হামলায় নিহত হন। রাশিয়া বলছে, তারা ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলাও প্রতিহত করেছে।
এই মিনিবাসে হামলাটি ঘটে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তিন বছরের মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনার কয়েক ঘণ্টার মাথায়। আলোচনায় একটি বন্দী বিনিময়ের চুক্তি হয়, তবে কোনো যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি মেলে না।
ট্রাম্প বলেছিলেন, তুরস্কে আলোচনা হলে তিনি অংশ নিতে প্রস্তুত — যদি পুতিনও রাজি থাকেন। তবে পুতিন তাতে সাড়া দেননি।
রাশিয়া এর আগেও সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল — যেমন ৮-১১ মে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয় দিবস উপলক্ষে। কিন্তু কিয়েভ এতে অংশ নেয়নি। তাদের দাবি, পুতিনকে বিশ্বাস করা যায় না, তাই ৩০ দিনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।
এর আগেও রাশিয়া ৩০ ঘণ্টার জন্য একটি ইস্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল। যদিও তখন লড়াই কিছুটা কমে। তবে উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে শত শত লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন চালানোর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ চলছে।
ওএফ