গাজায় ইসরায়েলি হামলা চিকিৎসকের ১০ সন্তানের ৯ জনই নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ২২:০৫

খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের নারী চিকিৎসক ডা. আলা আল-নাজ্জারের বাড়িতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী /ছবি : সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের নারী চিকিৎসক ডা. আলা আল-নাজ্জারের বাড়িতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ঘটনায় তার ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জনই নিহত হয়েছেন। আর তার স্বামী ও একমাত্র জীবিত সন্তান আহত হয়েছেন। খবরটি নিশ্চিত করেছে নাসের হাসপাতাল।
নাসের হাসপাতালের ব্রিটিশ সার্জন গ্রেইম গ্রুম জানান, তিনি চিকিৎসক আলা আল-নাজ্জারের ১১ বছর বয়সী জীবিত সন্তানের অস্ত্রোপচার করেছেন। ওই নারী চিকিৎসকের স্বামী হামদি আল-নাজ্জারও একজন চিকিৎসক এবং এই হামলায় তিনিও গুরুতর আহত হয়েছেন। স্ত্রীকে কর্মস্থলে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফেরার মিনিট কয়েকের মধ্যে বিমান হামলায় আহত হন হামদি আল-নাজ্জার।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মুনির আলবোরশ বলেন, হামলার সময় পরিবারের সবাই বাড়ির ভেতর ছিল। তাদের ১২ বছর বয়সী সন্তানদের দগ্ধ মরদেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়। মর্মান্তিক এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক। ভিডিওটি যাচাই করেছে বিবিসি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তারা খান ইউনিস এলাকায় সেনাদের পাশে থাকা একটি স্থাপনায় ‘সন্দেহভাজনদের’ লক্ষ্য করে হামলা চালায়। আইডিএফ জানিয়েছে, এই অঞ্চলটি একটি বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র। অভিযান শুরুর আগে বেসামরিক লোকদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছিল।’
তবে নিরীহ মানুষের প্রাণহানির অভিযোগ তারা পর্যালোচনা করছে বলে জানায়।
শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা গাজাজুড়ে ১০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত এক দিনে অন্তত ৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
নাসের হাসপাতালের চিকিৎসক ইউসুফ আবু আল-রিশ বলেন, অপারেশন থিয়েটারে এসে দেখি সহকর্মী ডা. আলা আল-নাজ্জার জীবিত সন্তানের খোঁজে ভেঙে পড়েছেন।
এদিকে ডা. আল-নাজ্জারের এক স্বজন ইউসুফ আল-নাজ্জার এএফপিকে বলেন, আর কতো? আমাদের দয়া করুন! আমরা সব দেশের, সব মানুষের, সব গোষ্ঠীর কাছে করজোড়ে মিনতি জানাই, আমাদের উপর দয়া করুন।
মানবিক বিপর্যয় ও খাদ্য সংকট
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার বলেছেন, গাজায় মানুষ ‘যুদ্ধের সবচেয়ে নিষ্ঠুর পর্যায়ে’ রয়েছে। মার্চে আরোপিত ইসরায়েলের অবরোধ আংশিকভাবে তুলে নেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শুক্রবার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানায়, ৮৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যেখানে প্রতিদিন প্রয়োজন অন্তত ৫০০-৬০০টি ট্রাক।
অতিরিক্ত ত্রাণ না থাকায় খাদ্যের জন্য গাজায় চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। রুটির জন্য মানুষের ভিড় করছে এবং সাহায্যের ট্রাক লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। জাতিসংঘ সমর্থিত এক মূল্যায়ন বলছে, গাজার ২১ লাখ মানুষ বর্তমানে চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে।
খাবার ও পানি সংকটের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ঘাটতিতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে স্যানিটেশন ও পানি সরবরাহের সুবিধাগুলো। সামরিক অভিযানের বিস্তারে আবারও গৃহহীন হয়ে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত অন্তত ৫৩ হাজার ৯০১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৬ হাজার ৫০০ জনের বেশি শিশু।
ওএফ