Logo

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনে রাশিয়ার ভয়াবহ ড্রোন হামলা, নিহত ১২

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ১৭:৩৫

ইউক্রেনে রাশিয়ার ভয়াবহ ড্রোন হামলা, নিহত ১২

রুশ ড্রোন হামলায় কিয়েভে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের দিকে একজন তাকিয়ে আছেন /ছবি : রয়টার্স

রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এক রাতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ১২ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তিনজন শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।

গত ৪৮ ঘণ্টায় এটি দ্বিতীয় বড় ধরনের হামলা। এর আগের দিনই রাজধানী কিয়েভে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অন্যতম ভয়াবহ আক্রমণ চালায় রাশিয়া। শনিবার রাতের এই হামলার সময় রাশিয়া কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির আহ্বানে কর্ণপাত করেনি। 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার সকালে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাশিয়া প্রতিদিন এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে এবং মানুষ হত্যা করছে। বিশ্ব হয়তো ছুটির দিনে বিশ্রাম নিচ্ছে, কিন্তু যুদ্ধ থেমে নেই।’

তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার নেতৃত্বের ওপর কঠোর চাপ ছাড়া এই নিষ্ঠুরতা থামানো সম্ভব নয়।’ 

তিনি নতুন করে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান এবং বলেন, ‘আমেরিকার নীরবতা কেবল পুতিনকে উৎসাহিত করবে।’

জেলেনস্কির এই বক্তব্য এমন সময় এলো যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। তবে পুতিন শুধু ‘ভবিষ্যৎ শান্তির সম্ভাব্য স্মারক’ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ দেখালেও ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি দেননি।

অভূতপূর্ব হামলার বিবরণ

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানায়, শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৪০ মিনিট থেকে শুরু হয়ে রাতভর রাশিয়া বিভিন্ন ধরনের ৩৬৭টি ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও ইউএভি দিয়ে হামলা চালায়। এর মধ্যে ইউক্রেন ৪৫টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে ও ২৬৬টি ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।

ইউক্রেনের অন্তত ২২টি স্থানে হামলার আঘাত লেগেছে। উদ্ধারকর্মীরা ৩০টির বেশি শহর ও গ্রামের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার কাজ করছেন। নিহতদের মধ্যে ঝিটোমির অঞ্চলের একটি পরিবারের তিন শিশু রয়েছে—তাদের বয়স ৮, ১২ ও ১৭ বছর। তাদের বাবা-মা গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

কিয়েভ অঞ্চলে ৪ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। কিয়েভ শহরেই ১১ জন আহত হয়েছেন, অনেক ভবনে আগুন লেগেছে, আবাসিক ভবন ও একটি ছাত্রীনিবাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য শত শত মানুষ পাতাল রেল স্টেশনে ছুটে যান।

বিবিসির একজন সাংবাদিক জানান, তার বাসা থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট দূরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

রাশিয়ার দাবি ও পাল্টা হামলা

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের সামরিক বিমানঘাঁটি, গোলাবারুদ ডিপো ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ কেন্দ্রসহ ১৪২টি স্থাপনায় আঘাত হেনেছে।

রোববার সকালে রাশিয়ার দাবি অনুযায়ী, তারা ১২টি অঞ্চলে ও ক্রিমিয়া উপদ্বীপে ১১০টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে। মস্কোর মেয়র জানিয়েছেন, রাজধানীর দিকে আসা ১২টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। টুলা অঞ্চলে একটি আবাসিক ভবনের উঠানে ড্রোন ধ্বংসাবশেষ পড়েছে, এতে জানালার কাচ ভেঙে গেছে, তবে কেউ হতাহত হয়নি।

বন্দি বিনিময় ও শান্তির ছায়া

হামলার সময় ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে তিন দিনের বৃহৎ বন্দি বিনিময় চলছিল। শুক্রবার শুরু হওয়া বিনিময়ে দুই পক্ষ ৩৯০ জন করে বন্দি ফিরিয়ে দেয়। শনিবার ৩০৭ ইউক্রেনীয় বন্দি ঘরে ফেরে ও রোববার ৩০৩ জনকে বিনিময় করা হয়। এভাবে তিন দিনে উভয় পক্ষই এক হাজার বন্দি বিনিময় করেছে।

এই বিনিময় প্রক্রিয়া তিন বছরের মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনা শেষে সম্ভব হয়েছে, যা তুরস্কে অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই ভয়াবহ হামলার পর, দুই পক্ষের মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতার আশা আবারও ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।

ওএফ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর