ইসরায়েলি হামলা
গাজার ছোট্ট সেলিব্রেটি ইয়াকিন হাম্মাদ আর নেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১১:০৯

ইয়াকিন হাম্মাদ /ছবি : সংগৃহীত
গাজার সবচেয়ে ছোট্ট সেলিব্রেটি ও স্বেচ্ছাসেবক মাত্র ১১ বছর বয়সী ইয়াকিন হাম্মাদ আর নেই। বয়সের তুলনায় আশ্চর্য রকম প্রজ্ঞাবান এই কিশোরী ক্ষতবিক্ষত গাজার জনজীবনে আশার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছিল।
তার কণ্ঠ ছিল ইসরায়েলি নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিশুদের পক্ষ থেকে এক সাহসী প্রতিবাদ।
কিন্তু শুক্রবার রাতে গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে সেই কণ্ঠ চিরদিনের মতো থেমে গেল। ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার বাসভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান ইয়াকিন।
গাজা উপত্যকার অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে থেকেও সে ইনস্টাগ্রামে মানবিক সহায়তার নানা দৃশ্য প্রচার করত। কখনো অনাথ ও বাস্তুচ্যুত শিশুদের পাশে দাঁড়ানো, কখনো বা তাদের সঙ্গে হাসিখুশি সময় কাটানো, খেলাধুলা, উপহার বিতরণ এসবই ছিল তার ভিডিওর বিষয়বস্তু। তবে এই উচ্ছ্বলতার মধ্যেও ফুটে উঠত ভয়াবহ বোমাবর্ষণের বাস্তবতা, যুদ্ধপীড়িত গাজার প্রতিদিনের সংগ্রাম।
ইয়াকিনের প্রতিটি ভিডিও ছিল এক ধরনের সাহসী ঘোষণা, ‘আমরা নত হব না, ধ্বংসের মধ্যেও বাঁচব।’
এক সময় যারা তার হাত থেকে হাসিমুখে উপহার নিয়েছিল, যারা তার ভিডিওতে স্বপ্ন দেখেছিল, তাদেরই একজন আজ নিজের জীবনের বিনিময়ে আরেকটি নাম যুক্ত করলেন গাজার শোকগাথায়।
হামলায় ধ্বংস হওয়া বাড়িগুলোর একটি ছিল শ্রেইতে পরিবারভুক্ত। উদ্ধারকর্মীরা পরে ঘটনাস্থলের বর্ণনায় বলেন, ‘এই ধ্বংস আর মৃত্যু ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
ইয়াকিন প্রায়ই তার বড় ভাই মোহাম্মাদ হাম্মাদের সঙ্গে ত্রাণ বিতরণ করত। মোহাম্মাদ একজন মানবিক সহায়তা কর্মী, যিনি ইয়াকিনকে নিয়ে উদ্বাস্তু পরিবারদের কাছে খাবার, পোশাক ও খেলনা পৌঁছে দিতেন।
ইয়াকিনের মৃত্যু গাজা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সাধারণ মানুষ শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, এই শিশুর স্কুলে থাকার কথা ছিল, অন্য শিশুদের মতো খেলার কথা ছিল।
অবরোধে জন্ম, বোমার নিচে বেড়ে ওঠা, আর অব্যাহত সহিংসতায় গড়ে ওঠা এক শিশুর নাম ছিল ইয়াকিন। সে চুপ থাকেনি, সাহসিকতা বেছে নিয়েছিল। ধ্বংসস্তূপের মাঝেও আশার আলো জ্বালিয়েছিল সে। তার সাহস ও ভালোবাসা বহু মানুষের মনে চিরস্থায়ী ছাপ রেখে গেল।
ইয়াকিন আর নেই। কিন্তু তার ভিডিও, তার হাসি, তার সহানুভূতির হাত সবই রয়েছে।
ওএফ