Logo

আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলি বোমা আর অনাহারে মরছে গাজার শিশুরা

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১৪:১৫

ইসরায়েলি বোমা আর অনাহারে মরছে গাজার শিশুরা

ইসরায়েলি বাহিনীর গত ৪৮ ঘণ্টার হামলায় গাজা উপত্যকায় অন্তত এক ডজনের বেশি ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে। একইসঙ্গে হাজার হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টি ও অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গোটা অঞ্চলটি।

রোববার ৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইয়াসিন অনাহারে মারা যায়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে অনাহারে মৃত্যু হওয়া শিশুদের সংখ্যা আরও বেড়ে গেল। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ৭০ হাজারের বেশি শিশু বর্তমানে চরম অপুষ্টির মধ্যে রয়েছে।

এই মানবিক দুর্যোগের মধ্যেই ইসরায়েল হামলা আরও জোরদার করেছে। এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা।

গাজার কেন্দ্রীয় শহর দেইর আল-বালাহতে শরণার্থীদের একটি তাবুতে বিমান হামলায় মা ও তার শিশুরা নিহত হয় বলে জানিয়েছে আল-আকসা হাসপাতাল। দক্ষিণের খান ইউনিসের বানি সুহেইলাতে একটি পরিবারের তাবুতে ড্রোন হামলায় নিহত হয় আরও এক শিশু।

উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় বোমা হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে বলে জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

১১ বছর বয়সী জনপ্রিয় ইনস্টাগ্রাম অ্যাকটিভিস্ট ইয়াকিন হাম্মাদ ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে নিহত হয়েছেন দেইর আল-বালাহ শহরের আল-বারাকা এলাকায়। তার ভাই মোহাম্মদ হাম্মাদের সঙ্গে তিনি ত্রাণ বিতরণে অংশ নিতেন এবং ওউনা নামে স্থানীয় মানবিক সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

একইসঙ্গে ডা. আলা আমির আল-নাজ্জারের ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জনই মারা যায় এক বিমান হামলায়। ১১ বছর বয়সী একমাত্র জীবিত সন্তান আদম বর্তমানে ইনটেনসিভ কেয়ারে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।

নিহত সন্তানেরা হলেন সিদার, লুকমান, সাদিন, রেভাল, রুসলান, জুবরান, ইভ, রাকান ও ইয়াহিয়া। তাদের বয়স ছিল সাত মাস থেকে ১২ বছরের মধ্যে।

ডা. আলা নাজ্জার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক, যেখানে তার স্বামীও গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন। 

সহকর্মী ডা. আহমাদ আল-ফাররা বলেন, ‘এটা কল্পনাও করা যায় না। তিনি এখনও নিজের সন্তান ও স্বামীর পাশে থাকার চেষ্টা করছেন।’

ইসরায়েল প্রায় তিন মাস ধরে গাজায় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে রেখেছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের ১৯ মাসব্যাপী হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে ৩১ শতাংশই শিশু। তবে যেসব মৃত্যুর সঠিক পরিচয় নিশ্চিত হয়নি, সেগুলো বাদে এই পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল জনবহুল এলাকাগুলোতে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে শিশুদের ওপর অতিমাত্রায় সহিংসতা চালাচ্ছে, যা শিশু হতাহতের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে।

৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইয়াসিনের দেহ হাসপাতালের বিছানায় নিথর হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা মাহমুদ বাসাল বলেন, ‘মোহাম্মদ অনাহারে মারা গেছে। কারণ সরাসরি ইসরায়েলের বাধার ফলে খাদ্য ও চিকিৎসা গাজায় পৌঁছাতে পারছে না।’

তিনি বলেন, ‘আজ ভয়টা সত্যি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোহাম্মদ প্রথম শিশু নয়, সে সম্ভবত শেষও নয়।’

গাজায় শিশুদের মৃত্যু এখন কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়—প্রতিটি শিশুর মৃত্যুর পেছনে লুকিয়ে আছে হাজারো প্রশ্ন। এক নিষ্ঠুর যুদ্ধযন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসহায় মানবতার প্রতিচ্ছবি। বিশ্বের নীরবতা আর নিষ্ক্রিয়তায় প্রতিটি শিশুর নিঃশ্বাস যেন ধীরে ধীরে থেমে যাচ্ছে।

ওএফ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ফিলিস্তিন ইসরায়েল যুদ্ধ গাজা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর