ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় তছনছ রাশিয়ার বিমান ঘাঁটি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১০:২৯

রাশিয়ার চারটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়ে অন্তত ৪০টি বোমারু বিমান ও যুদ্ধবিমানে ক্ষয়ক্ষতির দাবি করেছে ইউক্রেন। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সিক্রেট সার্ভিস এসবিইউ পরিচালিত ‘স্পাইডারস ওয়েব’ নামে একটি অভিযানে মোট ১১৭টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।
এসবিইউ-র একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, হামলার প্রস্তুতি নিতে প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছে। কাঠের তৈরি ভ্রাম্যমান কেবিনে ড্রোন লুকিয়ে রাখা হয় এবং ঘাঁটির কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট সময় হামলা চালানো হয়।
রাশিয়া এ হামলার কথা স্বীকার করে একে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ বলে অভিহিত করেছে। দেশটির পাঁচটি অঞ্চলে এসব হামলা হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
একই সময় ইউক্রেনেও রাতভর রুশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে কিয়েভ জানিয়েছে।
এই হামলার সময় রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা দ্বিতীয় দফা শান্তি আলোচনার জন্য ইস্তান্বুলে যাচ্ছিলেন। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরু করে এবং এখনো দেশটির প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে।
রবিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে জেলেনস্কি এসবিইউ প্রধান ভাসিল মালিউককে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, রাশিয়ার অভ্যন্তরে চালানো এই অভিযানের কেন্দ্র ছিল এফএসবির খুব কাছেই।”
উল্লেখ্য, এফএসবি হলো রাশিয়ার শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা।
জেলেনস্কি দাবি করেন, অভিযানে জড়িতরা হামলার আগেই রাশিয়া ত্যাগ করেছেন। এসবিইউ ধারণা করছে, রাশিয়ার কৌশলগত বিমান পরিবহন ব্যবস্থায় সাত বিলিয়ন ডলারের মতো ক্ষতি হয়েছে।
এসবিইউ বলছে, হামলার লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার চারটি বিমানঘাঁটি—সাইবেরিয়ার ইরকুতস্কে বেলায়া, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ওলেনিয়া, মধ্য রিয়াজানের ডিয়াজিলেভো ও মধ্য ইভানভো অঞ্চলের ইভানভো ঘাঁটি। এর মধ্যে দুটি ঘাঁটি ইউক্রেন সীমান্ত থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত।
এসব ঘাঁটিতে টিইউ-৯৫, টিইউ-২২এম৩ ও এ-৫০ মডেলের বোমারু বিমান রয়েছে, যেগুলো পরমাণু অস্ত্রবাহী করতে সক্ষম।
এসবিইউ সূত্র জানায়, ড্রোনগুলো প্রথমে রাশিয়ার ভেতরে প্রবেশ করে এবং কাঠের কেবিনের ছাদে সেট করে রাখা হয়। এরপর কার্গো ট্রাকে করে এগুলো ঘাঁটির কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ছাদ খুলে নির্দিষ্ট সময়ে হামলা চালানো হয়।
ইরকুতস্কের গভর্নর ইগর কোবজেভ নিশ্চিত করেছেন যে বেলায়া ঘাঁটিতে একটি ট্রাক থেকে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। তিনি জানান, এলাকাটি এখন নিরাপদ এবং আর কোনো প্রাণহানির শঙ্কা নেই।
রুশ সংবাদমাধ্যমগুলোও ট্রাক থেকে ড্রোন ছাড়া হয় বলে জানিয়েছে। মুরমানস্কেও হামলা হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। তবে সেখানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করেছে বলে জানানো হয়।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মুরমানস্ক ও ইরকুতস্কে বেশ কয়েকটি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে কোনো হতাহতের খবর নেই। হামলাকারীদের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে তারা।
অন্যদিকে, ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়া রাতভর ৪৭২টি ড্রোন এবং সাতটি ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এক হামলায় ইউক্রেনের একটি সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১২ জন সেনা নিহত হয়েছেন বলে জানায় দেশটির স্থল বাহিনী। এ ঘটনার পর বাহিনীটির প্রধান মেজর জেনারেল মিখাইলো ডিরাপাতাই পদত্যাগ করেছেন।
ওএফ