
ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ ভাঙতে গাজার উদ্দেশে ইতালি থেকে সমুদ্রপথে যাত্রা করেছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা ‘ম্যাডলিন’। এতে রয়েছেন সুপরিচিত জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, ‘গেম অব থ্রোনস’ অভিনেতা লিয়াম কানিংহাম, ফিলিস্তিনি-মার্কিন মানবাধিকার আইনজীবী হুওয়াইদা আররাফ ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান।
‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ (এফএফসি) নামের একটি সংগঠনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তারা গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি অবরোধ উপেক্ষা করে গাজার উদ্দেশ্যে মানবিক সহায়তা পাঠিয়ে আসছে। এটি চলতি বছর দ্বিতীয় দফা অভিযানের অংশ।
গত মে মাসে এফএফসির আরেকটি জাহাজ ‘কনসায়েন্স’ ভূমধ্যসাগরের মাল্টা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় হামলার শিকার হয়। দুটি ড্রোনের মাধ্যমে চালানো ওই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে সংগঠনটি। এতে জাহাজের সামনের অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে গ্রেটা থুনবার্গের পূর্ব নির্ধারিত যাত্রা বাতিল করতে হয়।
রোববার জাহাজ ছাড়ার আগে সুইডিশ পরিবেশকর্মী থুনবার্গ বলেন, ‘বিশ্ব চুপচাপ দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না।’
তিনি জানান, মানবিক ত্রাণ বহনকারী ‘ম্যাডলিন’ ইসরায়েলি অবরোধ সত্ত্বেও গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে যাচ্ছে।
ফরাসি বামপন্থী দল ‘লা ফ্রঁস ইনসুমিজ’-এর প্রতিনিধি ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় বলেন, এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো মানবিক সহায়তায় বাধা, চলমান গণহত্যা, ইসরায়েলের দায়মুক্তি এবং বিশ্বব্যাপী সচেতনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো।
তিনি আরও জানান, ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও ইসরায়েল তাকে প্রবেশাধিকার দেয়নি।
গত কয়েকদিনে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গাজায় কিছু মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা অবরোধের ফলে অঞ্চলটি মারাত্মক দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
সম্প্রতি ইসরায়েল নতুন একটি বিতর্কিত মানবিক সহায়তা বিতরণব্যবস্থা চালু করেছে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) নামের একটি যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সংস্থার মাধ্যমে, যা জাতিসংঘের দীর্ঘদিনের সমন্বয়ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে নতুন করে সহায়তা দিচ্ছে।
জিএইচএফ দাবি করছে, তারা এক সপ্তাহে কয়েক লাখ খাবার বিতরণ করেছে। তবে কেন্দ্রগুলোতে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা দেখা দিয়েছে। সহায়তা নিতে আসা বহু ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি খেতে হয়েছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় জিএইচএফের একটি বিতরণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি গুলিতে অন্তত ৩১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার কর্তৃপক্ষ।
জাতিসংঘসহ অনেক আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা জিএইচএফের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের মতে, এই সংগঠনটি মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘন করছে ও ইসরায়েলি সামরিক স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ মার্চ থেকে আবার ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত সেখানে অন্তত ৪ হাজার ১১৭ জন নিহত হয়েছেন। আর ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর থেকে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৩৮১ জনে, যার অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
ওএফ