বিল গেটসের বেশিরভাগ সম্পদ আফ্রিকায় দান করবেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৮:১৬

২০০ বিলিয়ন ডলার সম্পদের ৯৯ শতাংশ ২০৪৫ সালের মধ্যে দান করে দেবেন বিল গেটস /ছবি : সংগৃহীত
মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস জানিয়েছেন, আগামী দুই দশকে তার বেশিরভাগ সম্পদ আফ্রিকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
৬৯ বছর বয়সী এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা বলেছেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মাধ্যমে মানব সম্ভাবনার মুক্তি ঘটিয়ে আফ্রিকার প্রতিটি দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।
ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের (এআই) সদর দপ্তরে দেওয়া এক ভাষণে গেটস আফ্রিকার তরুণ উদ্ভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের মাধ্যমে এই মহাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যাপক পরিবর্তনের বিষয়ে চিন্তা করেন।
গত মাসে গেটস ঘোষণা দেন, তিনি তার প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার সম্পদের ৯৯ শতাংশ ২০৪৫ সালের মধ্যে দান করে দেবেন। ওই সময়ের মধ্যে তার গেটস ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি সম্প্রতি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আমার সম্পদ আগামী ২০ বছরের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হবে। এর বেশিরভাগই আফ্রিকায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যয় করা হবে।
গেটসের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে মোজাম্বিকের সাবেক ফার্স্ট লেডি গ্রাসা মাশেল বলেন, এই সংকটপূর্ণ সময়ে তার প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই গেটস এই পরিবর্তনের পথে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার জন্য বরাদ্দকৃত সহায়তা, বিশেষত এইডস চিকিৎসা কর্মসূচির অর্থ কমিয়ে দিয়েছে। এতে করে মহাদেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
গেটস বলেন, তার ফাউন্ডেশন আফ্রিকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে গুরুত্ব দেবে।
তিনি বলেন, আমরা শিখেছি, মায়ের গর্ভধারণের আগে ও গর্ভাবস্থায় তার পুষ্টি নিশ্চিত করলে এবং শিশুর প্রথম চার বছরে যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
তরুণ উদ্ভাবকদের উদ্দেশ্যে গেটস বলেন, যেমনটি মোবাইল ফোন আর্থিক লেনদেনে বিপ্লব এনেছে, তেমনি এখন এআইর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় পরিবর্তন আনার সময় এসেছে।
বিল গেটস বলেন, আফ্রিকা অনেকটাই ঐতিহ্যগত ব্যাংকিং প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে মোবাইল প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছে। এখন নতুন প্রজন্মের স্বাস্থ্যব্যবস্থা গঠনের সময় এসেছে, যেখানে কীভাবে এআই সংযুক্ত করা যায়, তা ভেবে দেখা উচিত।
রুয়ান্ডাকে একটি ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে গেটস বলেন, দেশটি ইতোমধ্যে এআই ব্যবহার করে আলট্রাসাউন্ড প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা শনাক্তে অগ্রগতি করেছে।
গেটস ফাউন্ডেশন জানায়, তাদের তিনটি প্রধান লক্ষ্য রয়েছে- প্রতিরোধযোগ্য মায়ের ও শিশুর মৃত্যু রোধ, আগামী প্রজন্মকে প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত রাখা এবং লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করা।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০ বছর পর আমাদের ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
গত মাসেই গেটস তার ব্লগে লিখেছেন, তিনি এখন থেকে আরও দ্রুত হারে সম্পদ দান করবেন। আমার মৃত্যু নিয়ে অনেক কথা হতে পারে, তবে আমি চাই না কেউ বলুক, ‘সে ধনী অবস্থায় মারা গেছে।’
ব্লুমবার্গের হিসাব অনুযায়ী, সম্পদের ৯৯ শতাংশ দান করার পরও বিল গেটস বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি থেকে যাবেন।
১৯৭৫ সালে পল অ্যালেনের সঙ্গে মিলে গেটস মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর সফটওয়্যারসহ প্রযুক্তি খাতে কোম্পানিটি প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।
গত কয়েক দশকে গেটস ধীরে ধীরে মাইক্রোসফট থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি ২০০০ সালে প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে এবং ২০১৪ সালে চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন।
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারী ও দানবীর ওয়ারেন বাফেটসহ আরও অনেক দানশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে গেটস ফাউন্ডেশনের সমালোচকরা বলেন, গেটস এর মাধ্যমে কর ফাঁকি দিচ্ছেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার করছেন।
ওএফ