Logo

আন্তর্জাতিক

গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষ

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ০৯:৩৩

গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষ

বর্তমানে গণতন্ত্র ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংকটে রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সাতশ কোটি মানুষ এখনো মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। অধিকাংশ দেশ মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বাস্তবতা তার বিপরীত।

সম্প্রতি প্রকাশিত জার্মান দাতব্য সংস্থা ব্রট ফুর ডি ভেল্ট–এর ‘আটলাস অব সিভিল সোসাইটি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে।

বিশ্বের ১৯৭টি দেশ ও অঞ্চল নিয়ে তৈরি এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—শুধুমাত্র ৪০টি দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কার্যকরভাবে সম্মানিত হয়, যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

এছাড়া, মাত্র ২৮ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বর্তমানে ‘মুক্ত’ দেশে বসবাস করেন। এসব দেশে নাগরিকরা পূর্ণ স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের অধিকার ভোগ করেন। এর মধ্যে রয়েছে নিউজিল্যান্ড, স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চল, অস্ট্রিয়া ও এস্তোনিয়ার মতো দেশ।

অন্যদিকে, ৪২টি দেশে নাগরিক অধিকারকে ‘বাধাগ্রস্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে—যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও স্লোভাকিয়া। এসব দেশে মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার থাকলেও নিয়মিত লঙ্ঘনের শিকার হয়।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষের বসবাস এমন দেশে, যেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের অধিকার নিয়ন্ত্রণ বা দমন করা হয়। ১১৫টি দেশকে ‘নিয়ন্ত্রিত’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন ও হাঙ্গেরি।

সর্বনাশা অবস্থায় রয়েছে ২৮টি দেশ, যেগুলোকে ‘অবরুদ্ধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এসব দেশে সরকারবিরোধী মত প্রকাশ করলেই গ্রেপ্তার, হয়রানি এমনকি হত্যার শিকার হতে হয়।

তবে সামান্য কিছু আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিতও রয়েছে। বাংলাদেশ, জ্যামাইকা, জাপান, ফিজি, লাইবেরিয়া ও পোল্যান্ডসহ ৯টি দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র কিছুটা অগ্রসর হয়েছে, যদিও ২০২৪ সালে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ ২৫ ধাপ পিছিয়ে পড়ে।

২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একপর্যায়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দাবি তোলে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন এবং ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

এই পরিবর্তনের পর থেকেই দেশে গণতন্ত্রের পথ কিছুটা উন্মুক্ত হয়েছে বলে মত বিশ্লেষকদের। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে। আমরা চাই, বাংলাদেশকে গণতন্ত্রপন্থী রাষ্ট্রগুলোর অংশীদার হিসেবে দেখতে।’

তবে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে নানা বিতর্কে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা, ভোটারদের একাংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা কিংবা গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত।’

ডিআর/এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর